Thursday 1 October 2009

ধর্ষিতা ছাত্রীদের পরিবারের কান্নায় স্তব্ধ পিরোজপুর


খলিদ সাইফুল্লাহ পিরোজপুর থেকে ফিরে noyadigonta 30/09/09
‘আমার মেয়ের সর্বনাশ করে যারা বাজারে ভিডিও চিত্র ছেড়েছে আল্লাহই তাদের বিচার করবেন।’ এক অসহায় মায়ের এমন আর্তনাদে পিরোজপুরের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সরকারদলীয় এমপি’র বিশ্বস্ত সহচর, দলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার এবং ছাত্রলীগ নেতা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কয়েকজন কিশোরীকে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ করে ভিডিও ছবি বানিয়ে বাজারে সিডি আকারে বিক্রির ঘটনায় পিরোজপুর শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে সংবাদটি প্রকাশের পর গোয়েন্দা পুলিশ সিডি বিক্রির দায়ে তিন ভিসিডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার হোতা ও তার সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। অবশ্য পিরোজপুরের এসপি গতকাল সìধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার মূল হোতাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তাকে অবশ্যই আটক করা হবে। লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষিত মেয়েদের অভিভাবকরা থানায় কোনো মামলা না করলেও বিষয়টি পিরোজপুর শহরের অভিভাবক মহলে ভীতির সৃষ্টি করেছে।
অতিসম্প্রতি পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসান কবির ওরফে টাইগার মামুন শহরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীসহ কয়েকজনকে ফুসলিয়ে বিভিন্ন স্খানে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের দৃশ্য তার সহযোগী গাঁজা মুনির ভিডিওতে ধারণ করে। টাইগার মামুনের দলীয় প্রতিপক্ষ মুনিরের কাছ থেকে ওই ভিডিওচিত্রটি কব্জা করে তা সিডি আকারে বিভিন্ন ভিসিডি ও সিডি দোকানে সরবরাহ করে। গত কয়েক দিন ধরেই এ সিডি পিরোজপুর শহরে গোপনে দেদার বিক্রি হচ্ছিল। পুলিশ এর কোনো খোঁজই রাখেনি। স্খানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানলেও রাজনৈতিক ও ক্ষমতাসীন দলের কারণে চুপচাপই ছিলেন।
কিন্তু গত সোমবার একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর পিরোজপুরের গোয়েন্দা পুলিশ শহরের কয়েকটি ভিসিডি ও সিডি দোকানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে। এদের মধ্যে গোপাল কৃষä মার্কেটের সৌখিন ভিডিও সেন্টারের মালিক সুমন তালুকদার, জেলা পরিষদ মাকের্টের মোল্লা টেলিকম ভিডিও সেন্টারের মালিক ফয়সাল গাজী ও কর্মচারী শাহিন হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’টি দোকান থেকেই কিশোরীদের ধর্ষণের ভিডিওচিত্র সংবলিত বেশ কিছু সিডি উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় ডিবি’র এসআই সুলতান আহমেদ ফকির বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে টাইগার মামুন ও গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজীম গ্রেফতাকৃতদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন বলে জানালেও গতকাল বিকেল ৪টায় পিরোজপুর কোর্টে এসংক্রান্ত কোনো আবেদন পৌঁছেনি। গতকাল আদালতে গ্রেফতারকৃতদের জামিন প্রার্থনা করা হলেও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তা নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিকে এ ঘটনায় পিরোজপুর শহরের সর্বমহলে চরম ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। স্খানীয় এমপি’র খুব কাছের লোক টাইগার মামুনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও পারছে না কেউ। এমনকি বেশির ভাগ ধর্ষিতার বাবা-মাও ঘটনার পর মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন। তারা সাংবাদিকদের সামনেও মুখ খুলতে নারাজ। এক কিশোরীর মা বলেন, এভাবে আমার মেয়ের জীবন যারা ধ্বংস করল এ দুনিয়ায় তাদের বিচার না পেলেও আল্লাহর কাছে তাদের বিচার দিলাম।’
পিরোজপুরের এসপি গতকাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টাইগার মামুন ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। ঘটনার সব আলামত উদ্ধারে অধিকতর জোর দেয়ার কথাও জানান তিনি।
এ দিকে আমাদের পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, সম্প্রতি নাজিরপুর কলেজ শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্বে একই কলেজের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে উপজেলা বনবিভাগের নার্সারির মধ্যে ফেলে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।

No comments:

Post a Comment