Tuesday 14 April 2009

সিডনিতে মন্দির প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়ে ইসলাম গ্রহন করলেন

বিশ্বস্থসুত্রে জানা গেছে যে শুধুমাত্র বৈবাহিক কারনেই সিডনীতে একজন হিন্দু ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকার সচেতন একজন নেতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ধর্মাšতর পর উক্ত নও-মুসলিম নিজের নাম মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রেখেছেন। আধুনিক মুসলিম বিশ্বের জন্যে এটি একটি নেয়ামত ও মহা সুসংবাদ। উক্ত ঝঞ্জাটের কারণে দখ্খীন ভারতীয় আদলে সিডনীতে হিন্দুদের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করার ঘোষনা দেয়ার পরেও তা আপাতত তিনি বা¯তবায়ন করতে পারছেন না। কিন্তু সিডনীর বাংলাদেশী মুসলমানরা কয়েকটি মাসালা ও একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও বাংলাদেশী হিন্দুদের পুজা-পার্বন করার কোন আসন বা মন্দির আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই উক্ত সম্প্রাদায়ের প্রাণের দাবী এই প্রশাšত মহাসাগর পাড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে যাওয়া। তাও তাজুল ইসলামের ধর্মাšতরের কারণে এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল। আর বুঝি বাংলাদেশী হিন্দুরা মন্দির পেলন না। তবুও ধর্মানুরাগী অনেক হিন্দুরা আজো বুকে পাথর চেপে গগনমুখী ভগবানের দৈব শক্তির পানে চেয়ে আছেন। তাজুল ইসলাম কি শেষ পর্যšত সনাতন ধর্মের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন? সংগ্রহ কর্ণফুলি

কলিযুগের রহিম বাদশাহ ও রপবান

কলি’র এই যুগে মাত্র একযুগ বয়সী একটি শিশু গত সোমবার [০৯/০২/২০০৯] বাবা হলো। তেরো বছর বয়সি উক্ত বৃটিশ শিশুটি তার ১৫ বছর বয়সি বালিকা বন্ধুর সাথে একরাতে অরতি কায়দায় সঙ্গম করে সম্প্রতি একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে সারা বৃটেনে মহা তোলপাড় তুলে দিয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশেড়বর উত্তরে ধাঁধাঁগ্রস্থ উক্ত ‘শিশু-পিতা’ জানেনা কিভাবে এখন সে তার পৈতৃক দায়ীত্ব পালন করবে। উক্ত বৃটিশ ‘শিশু-পিতা’ আলফী প্যাটার্ন সাংবাদিকদের প্রশেড়বর জবাবে আরো বলেছে ‘শিশুদের ন্যাপী’র মুল্য কত আমি জানি না, তবে মনে হয় অনেক দাম হবে।” বয়সের তুলনায় কচি-মুখের উক্ত ‘শিশু-পিতা’কে দেখতে মাত্র ৮ বছর বয়সি মনে হয়। তার ১৫ বছর বয়সি বালিকা বান্ধবি শ্যান্টেল ষ্টিডম্যান একটি সুস্থ্য কন্যা সন্তান জন্ম দেয়, নবজাতিকার নাম ম্যাসি রোক্্রানা। উক্ত শিশু দম্পতি সাংবাদিকদেরকে তাদের গর্ভধারনের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা এবং কিভাবে গোপনে গর্ভনাশ বিষয়টি তারা এড়িয়ে গেছে তা বি¯তারিত বর্ণনা করেছে। সাংবাদিকরা শিশু-পিতা আলফীকে জিজ্ঞেস করে, “কিভাবে তুমি এখন ফাইনানসিয়ালি বিষয়টি মোকাবেলা করবে?” উক্ত কঠিন শব্দের সাথে অপরিচিত অবুঝ আলফী সাংবাদিকদেরকে উল্টো জিজ্ঞেস করে বসে, “ফাইনানসিয়াল শব্দটির অর্থ কি?” লাজুক আলফী যার কন্ঠে এখনো শিশুর স্বর সে আরো বললো, “আমি ভেবেছিলাম একটি শিশু জন্ম দিলে ভালোই হয়। আমরা ভাবিনি কিভাবে আমরা আমাদের নবজাতিকাকে দেখভাল করবো। আমার নিজেরো কোন জেব-খরচ (পকেট-মানি) নেই। আমার মা যখন প্রথম বিষয়টি জেনেছিল আমি তখন ভেবেছিলাম আমি মহাবিপদেই পড়ে গেছি। আমরা শিশুটা রাখতে চাইছি কিন্তু জানিনা প্রতিবেশী লোকেরা কি বলবে। আমি জানতাম না বাবা হওয়ার অনুভুতিটি কেমন। তারপরেও একজন ভালো পিতা হতে আমি চেষ্টা করবো।” আলফী’র বালিকা বন্ধু শ্যান্টেল একজন স্কুল পড়–য়া মেয়ে। সন্তান প্রসবের পর শ্যান্টেল হাসপাতাল থেকে তার বাবার বাড়ীতে যায় যেখানে তার আরো পাঁচজন সšতান সহ তার পিতামাতা বাস করে। এই শিশু-দম্পতির উভয় পিতামাতারা সরকারী ভাতার উপর জীবনযাপন করছে। উক্ত বিষয়টি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দল সহ সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে, বিব্রত হয়েছে সংরনবাদী লাখো পিতামাতারা। তারা বৃটেনে অল্পবয়সে গর্ভধারন বিষয়টিকে রোধ করার কথা কঠিনভাবে ভাবছে।

ছাত্রলীগের তান্ডব এ তান্ডব কি থামানো যাবেনা?

রায়পুরে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ
Wednesday, April 1, 2009

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার বামনী গ্রামে এক প্রবাসীর কিশোরী কন্যা পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তরুণলীগের ৪ নেতার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়পুর থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় উক্ত দিন সন্ধ্যায় তাৎণিক এক সভায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ইউসুফ আজম সিদ্দিকীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। তারা এ মর্মে একটি সুপারিশ জেলা কমিটির নিকট প্রেরণ করেছে বলে যুগ্ম আহবায়ক আবু সাঈদ চৌধূরী শাকিল জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে প্রবাসী লেদু মিয়ার কিশোরী কন্যা (১৬) কে বামনী গ্রামের চৌধুরিয়ার বাড়ি থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ইউসুফ আজম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল যুবক নিয়ে যায়। ওই রাতেই তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ইউসুফ আজম (২৮), ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন (৩৫), উপজেলা তরুণলীগ যুগ্ম আহবায়ক সুজন কুমার ঘোষ (২৫) ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মুকুল পাটওয়ারী (৩৫) ও অজ্ঞাত এক যুবক। ঘটনার পরদিন সকালে কিশোরীকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। এ নিয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া হলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় তার পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। একইদিন পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সে নিজে বাদী হয়ে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার শিকার কিশোরী (লাভলী) বলেন, অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকে পুলিশী সহযোগিতা না নেওয়ার জন্য আমাদেরকে শাসিয়েছে। আমার উপর অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। অভিযুক্ত ইউসুফ আজম সিদ্দিকী বলেন, আমি ঘটনায় জড়িত নই। ওইদিন রাত ১০টায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে রাতে আমার জিম্মায় রাখি। আমি পরিস্থিতির শিকার। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, দলের ভাবমূর্তি ুন্ন করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এখানে ক্লিক করুন

Saturday 11 April 2009

জৈবিক সত্তা এবং রাজনৈতিক জীবন

আমাদের সমাজে রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইনের সঙ্গে মানুষের জৈবিক সত্তার সম্পর্ক সংক্রান্ত ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করবার- চিন্তার দরবারের সওয়াল-জবাব করবার তৌফিক আমরা এখনো অর্জন করিনি। মানুষ আধুনিক রাষ্ট্রে শুধুই কি ‘নাগরিক’? তার রাজনৈতিক পরিচয়ই কি শেষ কথা, নাকি মানুষ একই সঙ্গে প্রাণ বা জীবও বটে। যে জীবের জীবন নিয়ে মানুষ প্রাণসম্পন্ন হয়ে বাঁচে সেই জীবনের সঙ্গে মানুষের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনের সম্পর্ক কোথায়? রাষ্ট্র, আইন ও নাগরিকতার সঙ্গে প্রাণের বা মানুষের জীবনের সম্পর্কটা আসলে কী ? বলা হয়ে থাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে জনগণের ইচ্ছা ও সংকল্পের ওপর, সংবিধান যার অভিব্যক্তি। তাহলে জীবনের অবস্থানটা এখানে কোথায়? জীবনের সঙ্গে জীবনের ইচ্ছা ও সংকল্পের? মানুষ কি শুধু ইচ্ছা ও সংকল্পবান মাত্র? মানুষের জীবের জীবন বা প্রাণের জায়গাটার সঙ্গে তার রাজনৈতিক জীবন ও পরিমণ্ডলের ভেদচিহ্ন ঠিক কোথায়? কীভাবে এই ভেদটা ঘটল? সেই তর্ক রয়ে গেছে। রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সংকল্পের সঙ্গে নাগরিকদের প্রাণ ও জীবনের সম্পর্ক এই কালে গুরুতর প্রশ্ন হয়ে এখন হাজির হয়েছে। নাগরিকদের প্রাণ বা জীবন রাষ্ট্রের রাজনৈতিকতা বা নাগরিকদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের সাথে কোথায় ও কীভাবে সম্পৃক্ত সেটা এই কালে প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র হত্যা করতে পারে, কিন্তু সেটা করতে পারে আইনের অধীনে এবং স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে- এই অনুমান এবং এই অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘রাষ্ট্র’ সংক্রান্ত ধারণার গোড়ায় কোনো মুশকিল আছে কি না সেটা বিচারের দরকার হয়ে পড়েছে।

আসলেই। রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন হরণ করতে পারে- রাষ্ট্রের এই সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা খানিক সচেতন হয়ে উঠলেই একটা অস্বচ্চি তৈরি হয়। ‘সার্বভৌমত্ব’ বলতে আমরা যা বুঝি সেই বোঝাবুঝির ক্ষেত্রেও সংকট তৈরি হয়। সেটা আরো তীব্র হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় রাষ্ট্র ও আইন সংক্রান্ত প্রচলিত তত্ত্ব বা ধারণার মধ্যে এই অস্বস্তির সুরাহা হয় না। সেটা বুর্জোয়া রাষ্ট্র চিন্তাই হোক, কিংবা হোক মার্কসীয় রাষ্ট্রের ধারণা। দুটো ধারণাই কথাকথিত ‘আধুনিক’ রাষ্ট্রের, কারণ উভয় ধারণার মধ্যে রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন হরণ করতে পারে এই অনুমান সক্রিয়। মার্কসের রাষ্ট্র ধারণার মধ্যে রাষ্ট্র হচ্ছে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অভিব্যক্তি। শ্র্রেণী শোষণের বিলোপের মধ্য দিয়ে সমাজের মধ্য থেকে তৈরি হয়ে সমাজের ঊর্ধ্বে উঠে যাওয়া রাষ্ট্র আবার সমাজের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবার - অর্থাৎ ‘শুকিয়ে মারবার’ কথা। এই প্রতিশ্রুতি মার্কস আমাদের দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, মার্কসের ‘সার্বভৌমত্ব’ সংক্রান্ত ধারণা শ্রেণীর প্রশ্ন বাদ দিয়ে নয়। তাহলে সে সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রাণ হরণ করতে পারে সেই সার্বভৌমত্ব কোনো চিরকালীন বা শাশ্বত ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রই যদি না থাকে, যদি বিলীন হওয়াই রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক নিয়তি তাহলে সার্বভৌমত্বও আর কিসের? কিন্তু মার্কস নিজে প্রশ্নটি আমরা যে জায়গা থেকে তুলছি, সেই অবস্থান থেকে তোলেননি। প্রচলিত মার্কসবাদও নয়। আমরা বড়জোর আন্দাজ করতে পারি মার্কসের রাষ্ট্র বা সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত ধারণা সুনিি র্দষ্ট ঐতিহাসিক বাস্তবতার সঙ্গেও যুক্ত। যে বাচ্চবতার মধ্যে রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রাণ হরণ করতে পারে এবং এই পারাটাকে স্বাভাবিক মনে করে, রাষ্ট্রের বিলয়ের মধ্য দিয়ে সেই বাচ্চবতা এবং তার সঙ্গে যুক্ত সকল ধারণারও বিলয় ঘটবে। কিন্তু ঘটবেই সেই দাবি করবার কোনো পদ্ধতিগত বা তত্ত্বগত দিকনির্দেশনা মার্কস বা মার্কসবাদের মধ্যে আমরা পাই না। অর্থাৎ পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিলয় ও রাষ্ট্রসকল শুকিয়ে মরার পরে ঠিক কী ঘটবে বা ঘটতে পারে সেই বিষয়ে আমরা চিন্তাই শুরু করিনি।

কিন্তু বড়লোকের রাষ্ট্র ও বড়লোকের আইনকে ভেঙে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিধান বা গণতন্ত্র কায়েম করতে হলে বলপ্রয়োগের প্রশ্নকে আমরা আলোচনার বাইরে রাখতে পারি না। ওয়ালটার বেনজামিন যে কারণে তাঁর প্রখ্যাত নিবন্ধ ‘বলপ্রয়োগ বিচার’-এর শুরুতেই বলছেন, বলপ্রয়োগের বিচারের দায় অল্পকথায় আইন ও ইনসাফের সাথে তার সম্পর্ক বিশদ করে মেটানো যায়।’ অর্থাৎ বলপ্রয়োগের প্রশ্ন বিদ্যমান আইন ও সংবিধান বা রাষ্ট্রের বিপরীতে নতুন আইন, সংবিধান বা রাষ্ট্রের আবির্ভাবের প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। বিদ্যমান আইন, সংবিধান বা রাষ্ট্রের চোখে তার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যখনই রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের ক্ষমতার ওপর একচেটিয়া বহাল রাখাকে চ্যালেঞ্জ করে তখন রাষ্ট্র তাকে সবসময়ই ‘সন্ত্রাসী’ বলতে বাধ্য। তাই নয় কি ? ‘কমিউনিস্ট’ বা ‘ইসলামপন্থি’ উভয়েই রাষ্ট্রের চোখে সন্ত্রাসী। অন্যদিকে বিদ্যমান রাষ্ট্র তার প্রতিপক্ষের চোখে অন্যায় রাষ্ট্র- তাকে টিকিয়ে রাখার কোনোই যৌক্তিকতা নাই। কি আদর্শ বাস্তবায়ন করবার জন্য বলপ্রয়োগ করা হলো বা বলপ্রয়োগ নীতিনৈতিকতার দিক থেকে ভালো কি মন্দ- সেই সকল তর্ক ওয়ালটার বেনজামিন দেখিয়েছেন আইন ও ইনসাফের সঙ্গে সম্পর্ক বিচারের দিক থেকে অপ্রাসঙ্গিক। আমরা নৈতিক দিক থেকে অহিসংবাদী হতেই পারি। নীতিগতভাবে বলপ্রয়োগ পছন্দ না করবার যথেষ্ট কারণ আমাদের থাকতে পারে। কিন্তু নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বলপ্রয়োগের সঙ্গে আইন ও ইনসাফের সম্পর্ক বুঝতে আমাদের সহায়তা করে না। অন্যদিকে আবার বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট বিপ্লবের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বলপ্রয়োগ ‘ভালো’ বা সেটা ইতিবাচক অর্থে ‘বিপ্লবী কর্মকাণ্ড’- আর, ইসলামি বিপ্লব- যাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য আমরা পছন্দ করি না- সেই উদ্দেশ্য বাচ্চবায়নের জন্য বলপ্রয়োগ ‘মৌলবাদী’ ও মন্দ- উদ্দেশ্য দিয়ে বলপ্রয়োগ বিচারের এই পদ্ধতিও ওয়ালটার বেনজামিন দর্শনের জায়গা থেকে নাকচ করে দিয়েছেন। ঠিক তেমনি অসম, শোষণমূলক ও গরিবের ওপর ধনীর আধিপত্য বহাল রাখবার জন্য বলপ্রয়োগ মানেই ‘শান্তি’ রক্ষা ও সন্ত্রাস দমন- এই ধারণাও বিদ্যমান ব্যবস্থার সুবিধাভোগীদের ধারণা মাত্র- এই সহজ ব্যাখ্যাও যথেষ্ট নয়। বিদ্যমান আইন বা রাষ্ট্র বলপ্রয়োগ ছাড়া এবং বলপ্রয়োগের ওপর নিজের একচেটিয়া বহাল না রেখে টিকে থাকতে পারে না। আইন মাত্রই বলপ্রয়োগের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, বলপ্রয়োগ ও আইনের এই সম্পর্ক দার্শনিক পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বলপ্রয়োগের প্রশ্নকে হাজির করতে হবে আইন ও ইনসাফের সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচার করে। কোন উদ্দেশে বলপ্রয়োগ করা হলো বা হচ্ছে সেই উদ্দেশ্য বিচার করে বলপ্রয়োগের নিজস্ব স্বভাব আমরা ধরতে পারব না। বলপ্রয়োগের নিজস্ব চরিত্র ও ভূমিকাও আমরা বুঝব না।

এবার আসা যাক জীবের জীবন আর রাজনীতি- অর্থাৎ যে জীবন রাষ্ট্র বা সার্বভৌম ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত সেই বিষয়ে দুই-একটি কথা।



২.

গ্রিক ভাষায় ‘জন্তু’ (ুড়ব) ও জীবন (নরড়ং) দুটো ভিন্ন শব্দ, তাদের মানেও আলাদা। প্লেটো তাঁর চযরষবনঁং-এ তিন ধরনের ‘জীবন’ নিয়ে কথা বলেছেন। এরিস্টটল সেই প্রসঙ্গে তিন ধরনের জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাদের পাথর্ক্য নিয়েও আলোচনা করেছেন। এক ধরনের জীবন হলো তত্ত্বচর্চার বা দার্শনিকের জীবন (নরড়ং ঃযবৎবঃরশড়ং) ; ভোগ বা বিনোদনের জীবন (নরড়ং ধঢ়ড়ষধঁংঃরশড়ং) এই জীবন থেকে আলাদা। ঠিক তেমনি রাজনৈতিক জীবন (নরড়ং ঢ়ড়ষরঃড়শড়ং) অন্য দুই জীবন থেকে আলাদা। লক্ষ করার বিষয়, যে জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁরা কথা বলছেন জীবনের বিশেষ ধরন, বৈশিষ্ট্য বা মান নিয়ে। আলোচনার প্রসঙ্গ হচ্ছে মানুষের জীবনের ‘পরম ইষ্টি’ কী ? পরম ইষ্ট বা পরম ভালো ? মানুষের জীবনের পরামার্থিক মূল্য কিসে ?

ইটালির দার্শনিক গিওর্গিও আগামবেন গ্রিক শব্দের ব্যুৎপত্তি দিক বিচার করে বলছেন, প্রাকৃতিক জীবন বা জীবের জীবন নিয়ে প্লেটো বা এরিস্টটল কথা বলছেন না। জীবনের যে প্রকার বা ধরন নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন সেখানে জীবনের জীবন- যে জীবন প্রাণী হিসেবে মানুষও যাপন করে- সেই জীবন একদমই তাঁদের বিষয় নয়। বরং কথা বলছেন জীবনের বিশেষ ধরন নিয়ে। জীবনের এই বিশেষ ধরনের ‘পরম ইষ্ট’ কোথায় পরিণতি লাভ করবে তার উত্তর দিতে গিয়ে এরিস্টটল তাঁর পলিটিক্স বইতে বলছেন :

‘জীবন সাধারণভাবে সকল মানুষ এবং প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে [পরম ইষ্টর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ] এই জীবনের সর্বোত্তম পরিণতি। কিন্তু মানুষ আবার সংঘবদ্ধও হয় এবং জীবনের সহজভাবে বেঁচে থাকা বিবেচনা করে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর চরিত্রও বহাল রাখে। এর কারণ সম্ভবত এই যে শুধু জীবনযাপনের মধ্যেই এক ধরনের ইষ্ট আছে। জীবনযাপনের ধরনে যদি কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটে তবে এটা পরিষ্কার যে অধিকাংশ মানুষ জীবনের অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করেই জীবন ধারণ করবে, যেন জীবনের মধ্যেই এক ধরনের প্রশান্তি ও স্বাভাবিক মিষ্টময়তা বিরাজ করে।’

জীবের জীবন বা যে জীবন প্রকৃতি বা প্রাকৃতিতার অধিক কিছু নয় সেই সরল প্রাকৃতিক জীবন আর জীবন বলতে ওপরে বা বোঝানো হয়েছে দুইয়ের মধ্যে তফাত আছে। গ্রিক চিন্তার মধ্যে নগর-রাষ্ট্রের যে ধারণা সেখানে এই প্রাকৃতিক জীবন বা প্রাণ একদমই অন্তর্ভুক্ত নয়। জীবনের পরম ইষ্ট নগর রাষ্ট্রে যে পরম পরিণতি লাভ করে সেই জীবন আর প্রাকৃতিক জীবনের ধারণার মধ্যে এই গোড়ার পার্থক্য বজায় রেখেই গ্রিক নগর রাষ্ট্রের ধারণা এবং সেই ধারণা আত্মস্থ করে আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা গড়ে উঠেছে। এই পার্থক্য কঠোরভাবেই মানা হতো, কারণ চড়ষরং যদি রাজনৈতিকতার পরিমণ্ডল হয় তাহলে তার বিপরীতে প্রাকৃতিক জীবন বা প্রাণের পরিমণ্ডল ছিল ঙরশড়ং বা গৃহ। এরিস্টটল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পত্তি প্রধান আর পরিবার প্রধানের মধ্যে পার্থক্য টেনেছিলেন এবং যারা এই দুইয়ের পার্থক্যকে নিছকই পরিমাণগত মনে করত, গুণগত নয়, তাদের তিরস্কার করেছেন। অর্থাৎ ঘর যেহেতু আহার, বাসস্থান ও সন্তান উৎপাদন ও প্রতিপালনের তার সঙ্গে রাজনীতির ক্ষেত্র গুণগতভাবে আলাদা। এই দুই ক্ষেত্রে জীবন বলতে আমরা যা বুঝি তার অর্থও আলাদা। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের যে জৈবিকতা আর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তার যে রাজনৈতিক অচ্চিত্ব দুইয়ের পার্থক্য বজায় রেখেই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা গড়ে উঠেছে। এরিস্টটল জীবের জীবনের সঙ্গে রাজনৈতিক জীবনের গুণগত পার্থক্য এত পরিচ্ছন্নভাবে এঁকেছেন যে জীবের জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা আর রাজনৈতিক অচ্চিত্বের পার্থক্য হচ্ছে মানুষ ‘জীবন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে কিন্তু অচ্চিত্ব যাপন করে আসলে পরম ইষ্টে’। পরম ইষ্টে অচ্চিত্ব যাপনের পরম পরিণতি নগর-রাষ্ট্র। এটি এরিস্টটলের পলিটিক্স গ্রন্থের একটি প্রখ্যাত উক্তি।

একই গ্রন্থে তাঁর বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে মানুষ রাজনৈতিক জীব। মানুষ জীব নয়, জীবের সঙ্গে তার পার্থক্যের জায়গা হচ্ছে জীব রাজনৈতিক নয়, কিন্তু মানুষ রাজনৈতিক। জীবের জীবন তার মনুষ্যত্বের সত্য নয়, তার সত্য রাজনৈতিকতায়। প্রজাতি হিসেবে জীবের সঙ্গে তার পার্থক্যের জায়গাও এখানে। মানুষের এই পার্থক্য নির্ণয়ের পরেই কেবল তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মানুষের রাজনীতি গঠিত হয় রাজনৈতিকতার আরেকটি গুণ দিয়ে, সেটা হচ্ছে ভাষা। মানুষ ভাষাসম্পন্ন প্রাণী। অতএব জীবের মতো শুধু জীবের আরাম ও বেদনার মধ্যে মানুষের জীবন সংকীর্ণ নয় বরং ভাষার মধ্যে গড়ে ওঠে ‘ভালো’ ও ‘মন্দ’ সংক্রান্ত ধারণা এবং ‘অন্যায়’ ও ‘ইনসাফ’ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে মানুষের রাজনৈতিক জগৎ বা রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। জীবের জীবনের সঙ্গে মানুষের জীবনের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো এরিস্টটলের এই জায়গা থেকেই শুরু করে তাঁর ‘ইন্দ্রিয়পরায়ণতার ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন কীভাবে জীবের জীবন বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের ধারণা গড়ে ওঠার পর আধুনিক রাষ্ট্রে মানুষের জৈবিক জীবন রাষ্ট্রের গোচরে আনা শুরু হয়। রাষ্ট্র ভূখণ্ডকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের ধারণা জনগণকেন্দ্রিক ধারণায় রূপান্তরিত হতে শুরু করে, জনসংখ্যা, জনগণের স্বাস্থ্য ইত্যাদি রাষ্ট্রের বিষয়ে পরিণত হতে আরম্ভ করে। রাষ্ট্র ক্ষমতার কারিগরি বা কায়কারবারের মধ্যে মানুষের শরীর ও জৈবিক অস্তিত্ব নতুন হিসেবে নিকাশের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজনীতি, মিশেল ফুকোর ভাষায় জীব (শাসন) নীতিতে পরিণত হয়। ফুকো বলছেন, ‘হাজার বছর ধরে এরিস্টটলের কাছে মানুষ রাজনৈতিক অচ্চিত্ব যাপনের বাড়তি ক্ষমতাসম্পন্ন জীবন্ত জন্তু হয়েই ছিল; আধুনিক মানুষ হচ্ছে এমন জীব যার রাজনৈতিক অচ্চিত্ব তার জীব হিসেবে অচ্চিত্বযাপনকেই প্রশ্নবোধক করে তুলেছে।’

ফুকো চাইছিলেন রাষ্ট্র সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা তাঁর সময় অবধি যেখানে প্রধানত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্রের বিচারে পর্যবসিত হয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে রাষ্ট্র সরাসরি কীভাবে আমাদের শরীর ও জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই বাচ্চব কারিগরির দিকে যেন আমরা নজর দেই। কোনো আগাম অনুমান ছাড়া। রাষ্ট্র আমাদের চিন্তা ও শরীর কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সেই টেকনিকগুলো জানা রাষ্ট্র বোঝার জন্য জরুরি সন্দেহ নেই। রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণার আইনি মডেল, যেমন, রাষ্ট্র ক্ষমতার বৈধতা তৈরি হয় কিসে, কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক বিচার, যেমন, রাষ্ট্র কাকে বলে- ফুকো এই মডেলগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন, যাতে রাষ্ট্র মানুষের মন ও শরীর উভয়কে আসলেই কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তার কলাকৌশল তিনি সরাসরি বর্ণনা করতে পারেন। রাষ্ট্রের আলোচনায় সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত আলোচনার প্রাধান্য থেকে বেরিয়ে আসাও তাঁর তাগিদ ছিল যাতে আসলে বাচ্চবে রাষ্ট্র কীভাবে কাজ করে সেই দিকটা মূর্ত বাচ্চব প্রক্রিয়া হিসেবে তিনি ধরতে পারেন। অর্থাৎ রাষ্ট্র সংক্রান্ত আলোচনার প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি জীব (শাসন) নীতির কারিগরি প্রত্যক্ষ করে নতুন একটি মডেল খাড়া করতে পারেন।

আগামবেন ফুকোর অবদানকে স্বীকার করেন, অবশ্যই। কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন ফুকোর অবদান স্বীকার করে নিলেও সমস্যা থেকে যায়। আইনি-প্রাতিষ্ঠানিক আর জীবশাসননীতি এই দুইভাবে রাষ্ট্রকে বিচারের মধ্যে সম্পর্কটা তাহলে কী ? রাষ্ট্র বিচারের এই দুই পদ্ধতিকে কোনোভাবেই আলাদা করা যাবে না, তাদের আসলে একই সমস্যা মোকাবিলার দিক থেকে দেখতে হবে। রাষ্ট্র আগে জীবের জীবনকে তার ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেনি, আধুনিক রাষ্ট্রের একটা পর্যায়ে এসে জীবের জীবন রাষ্ট্রের বিষয় হয়ে উঠছে। কিন্তু এটা তো হতে পারে রাষ্ট্র শুরুতেই জীবের জীবনকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিকতার যে পরিমণ্ডলকে চিন্তা করেছিল সেখানেই রয়ে গেছে মুশকিল। সেটা রয়ে গেছে সার্বভৌমত্বের ধারণার মধ্যেই। জীবের জীবন যদি শুরুতেই রাজনীতির বাইরে থেকে যায়, অথচ যে মানুষ রাজনৈতিক সে একই সঙ্গে জীবও বটে- তাহলে এই জীবন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা থেকে অদৃশ্য ছিল, কিন্তু বিযুক্ত ছিল না। আধুনিক সময়ে সেই জীবের জীবনই এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আগামবেন সেই দিকটাই আমাদের দেখিয়েছেন।

তাঁর বিখ্যাত বই ঐড়সব ঝধপবৎ-এ তিনি বলছেন গ্রিক সময় থেকেই মানুষের জীবের জীবন বাদ দিয়ে তাকে ‘রাজনৈতিক প্রাণী’ হিসেবে রাষ্ট্র ধারণার গোড়ায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে৪ এবং নগর, রাজনীতি, ক্ষমতা ইত্যাদি সেই প্রতিস্থাপনের প্রকাশ হিসেবে আমরা দেখে আসছি সেখানেই রয়ে গেছে মুশকিল। রাজনৈতিক জীবনের দিক থেকে দেখলে মানুষের জীবের জীবন হচ্ছে ন্যাংটা অর্থাৎ প্রতিরক্ষাহীন, আগামবেনের ভাষায় নধৎব ষরভব বা শুধুই প্রাণ। জীব। রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের দিক থেকে একমাত্র তার রাজনৈতিকতাই (যেমন, তার ব্যক্তি অধিকারে) রাষ্ট্র স্বীকার করে বটে কিন্তু ততটুকুই যতটুকু মানুষের রাজনৈতিক সত্তা রাষ্ট্র মেনে নেয়। জীবনের কতটুকু রাজনীতিকরণ করা গেল সেটা সংবিধানের মৌলিক মানবিক অধিকার অংশে আমরা দেখতে পারি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না’ (অনুচ্ছেদ ৩২)। অর্থাৎ রাষ্ট্র অবশ্যই জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে ব্যক্তিকে বঞ্চিত করতে পারে, তবে রাষ্ট্রের দায় শুধু অতটুকুই যে সেটা আইন অনুযায়ী করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার যাই থাকুক রাষ্ট্র ১৪২ ধারা অনুযায়ী যা খুশি আইন করতে পারে। এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে এ কথাও পরিষ্কার বলা আছে যে, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত সংশোধনের ক্ষেত্রে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই প্রযোজ্য হইবে না’। ‘(২৬ (৩)। তাহলে আগামবেন যাকে ’নধৎব ষরভব’ বা ন্যাংটা বা খোলা জীবন বলছেন তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে বা তথাকথিত রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের কাছে নাগরিকরা ‘পবিত্র’, কিন্তু এই অর্থে পবিত্র ও যে রাষ্ট্র এই জীবনকে উৎসর্গ করে দিতে পারে না, অথচ রাষ্ট্রের কাছে এই জীব-জীবনের কোনোই রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই।

রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে আগামবেনের জীবের জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের সম্পর্ক বিচারের প্রসঙ্গ সরাসরি জড়িত। আগামবেন বলছেন সার্বভৌম ক্ষমতার পরিমণ্ডল পবিত্র মানুষের প্রতীকী ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই অর্থে যে জীবের জীবনকে রাষ্ট্র বাদ দিতে পারে না বা উৎসর্গ করতেও পারছে না, কিন্তু জীবন এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে যেখানে বাঁধা পড়ে গেল সেখানে তাকে হত্যা করা চলে। যে জীবনকে বাদ বা উৎসর্গ করা যায় না কিন্তু হত্যা করা যায়- আধুনিক রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব মানুষের জীবের জীবনকে এইভাবে নগ্ন বা খোলা জীবনে পর্যবসিত করেই সার্বভৌম হয়ে ওঠে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা একই সঙ্গে নগ্ন ও খোলা জীবনকেও তৈরি করে, যাকে রাষ্ট্রে হত্যা করতে পারে। আগামবেন বলছেন,

‘যদি তাই হয় জীবন ও ভালো জীবনের বিরোধিতার জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের যে সংজ্ঞা এরিস্টটল দিয়েছেন। তার অর্থ আমাদের এখন পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এই বিরোধিতা আসলে একই সঙ্গে দ্বিতীয়ের মধ্যে প্রথমটির অর্থ বিজড়িত করা, রাজনৈতিকভাবে গুণান্বিত জীবনের মধ্যে ন্যাংটা জীবনের প্রক্ষেপ। এরিস্টটলীয় সংজ্ঞার ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি আমাদের করা বাকি সেটা শুধু ‘ভালো জীবন’ কথাটার মানে, তার ধরন বা তার পরিণতির গতি কীভাবে রাজনৈতিকতা হয়ে ওঠে সেখানে নয়, যদিও এটাই এতকাল অনুমান করে রাখা হয়েছে। আমাদের বরং প্রশ্ন করতে হবে কেন পাশ্চাত্যের রাজনীতির পরিগঠন ন্যাংটা জীবনকে বাদ রেখেই নিজেকে আগে পরিগঠন করে (এই পরিহার একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিও বটে) প্রশ্ন করতে হবে রাজনীতি ও জীবনের সম্পর্ক কী ? যদি জীবন নিজেকে এমন হাজির রাখে যে তাকে বাদ রেখেই তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে থাকে? (আগামবেন ১৯৯৫; পৃ-৭)

এই কালের রাজনীতির দিক থেকে এই প্রশ্ন নতুনভাবে উঠছে। রাষ্ট্র ও জীবনের সম্পর্ক কী ? জীবের জীবনের জায়গা থেকে রাষ্ট্রের বিচার অতি আবশ্যিক বিপ্লবী কর্তব্য হয়ে উঠেছে।
ফরহাদ মজহার

নেতৃত্ব ও বীরত্ব

নেতৃত্ব এবং বীরত্ব এক বস্তু নয়, দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বীরত্বের ব্যাপারটা মূলত ব্যক্তিগত; ব্যক্তিই সেটা অর্জন করে। নিজের মতো করে। ওদিকে নেতৃত্বের ঘটনা যে কেবল ব্যক্তিগত তা নয়। মূলত তা সমষ্টিগত। নেতার ব্যক্তিগত বিভূতি থাকবে, তার মধ্যে বীরত্বও প্রত্যাশিত; কিন্তু তিনি অতিঅবশ্যি অনেকের সঙ্গে যুক্ত হতে চান। সামনে থাকেন, পেছনে না থেকে, তবে বিচ্ছিন্ন থাকেন না। নেতা হচ্ছেন জনতার পথ প্রদর্শক। তার প্রধান গুণ সাহস নয়, প্রধান গুণ বিচক্ষণতা। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অপরিহার্য হয়ে ওঠে ঝুঁকি নেওয়া। আমাদের সংস্কৃতিতে বীরত্ব গুরুত্ব পায়, নেতৃত্বের চেয়ে বেশী। যে জন্য নেতা পাওয়া যায় না, কিন্তু বীর পাওয়া যায় যেখানে-সেখানে। নেতাকে বীর করে তুলি, গলায় মালা দিই, পারলে নতজানু হই। কিন্তু ওই যে বলছিলাম সৃষ্টিশীলতা, তার জন্য তো নেতৃত্ব দরকার। বড় ছোট সর্বত্র এমন মানুষ চাই যিনি দৃষ্টান্ত হবেন, পরামর্শ দেবেন, সন্ধান জানাবেন পথের, দিশা তুলে ধরবেন চলবার। তাকে চাই রাষ্ট্রীয় কাজে, চাই প্রতিষ্ঠানে, সংগঠনে, বিদ্যালয়ে, পাড়ায়-মহল্লায়, যে-কোনো আয়োজনে।

রাজনীতির ক্ষেত্রে গত ত্রিশ বছরে বেশ কয়েকজন নেতা এসেছেন। নেতা না হোন, তাদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ছিল নেতৃত্ব দেবার। তাদের কথা একটু পরে বলবো, যারা আগেও ছিলেন, কিন্তু এখন পরলোকগত। নতুনদের ব্যাপারটাই প্রথমে ধরা যাক। যুদ্ধের ভেতর দিয়ে কেউ কেউ এসেছিলেন, এদের প্রস্তুতিটা ছিল ষাট দশকের ছাত্র আন্দোলনে, যার প্রধান ধারাটা ছিল জাতীয়তাবাদী। আজ তাদের অধিকাংশই থেকেও নেই; কেউ কেউ আবার একেবারেই বসে পড়েছেন। যারা রয়েছেন তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন; বিত্তশালী হয়েছেন, কিন্তু নেতৃত্বের গৌরবটাকে ধরে রাখতে পারেননি। বাম ধারায় যারা ছিলেন তাদের কাছে প্রত্যাশাটা ছিল আরো অধিক। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। অনেকেই জাতীয়তাবাদী সেজে বড় দলে চলে গেছেন, গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে বীর হয়েছেন কিন্তু নেতা থাকতে পারেননি, বড় নেতা হওয়া তো দূরের ব্যাপার। উজ্জ্বলতা নেই, উদ্ভাস অনুপস্থিত। যারা বাম ধারায় টিকে রয়েছেন, তারাও মনে হয় বেশ কাবু হয়ে পড়েছেন, নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন আশা নিজের মধ্যেও নেই। আবার আত্মবিশ্বাসে যারা বলীয়ান তারা অনেকেই দেখি বেশ ভালো রকমের আমলাতান্ত্রিক।

বীরের জন্য আদর্শবাদ অপরিহার্য নাও হতে পারে, কিন্তু নেতার জন্য তা একেবারে প্রাথমিক শর্ত। জাতীয়তাবাদী এবং বামপন্থী উভয় স্রোতেই নেতৃত্ব যে কাহিল হয়ে পড়েছে তার বড় কারণ আদর্শবাদের ঘাটতি। তা আদর্শবাদটা গেলো কোথায়? সরলীকরণ যদি অগ্রাহ্য না হয় তবে বলা যাবে চলে গেছে শ্রেণীর উদরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় দুর্দান্ত রকমের পুঁজিবাদী; তার বীরত্ব অন্যকিছুতেই নেই, আছে টাকা করাতে। এই আদর্শবাদের কাছে সমষ্টিগত স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যে আদর্শবাদ সেটা টিকবে কেন, টিকবে কোন জোরে?

একটু পেছনের দিকে তাকালে আমরা তিনজন প্রয়াত অতিবিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখতে পাবো, যারা একই সঙ্গে বীরও ছিলেন, নেতাও ছিলেন। এরা হলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফজলুল হক নিজের বীরত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। অবাঙালী মুসলমানেরা তাকে ‘শেরে বাংলা’ উপাধি দিয়েছিল, সে উপাধিকে তিনি যে অগ্রহণযোগ্য মনে করেছেন তা নয়। তিনি নেতৃত্বও দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত ও কৃষক উভয়ের জন্যই তিনি উল্লেখযোগ্য কাজ রেখে গেছেন। কিছুটা হলেও কৃষককে মুক্তি দিয়েছেন ঋণের জোয়াল বহন থেকে, উঠতি মধ্যবিত্তকে সাহায্য করেছেন শিক্ষা ও চাকরির ব্যাপারে। বাংলার রাজনীতিতে এক সময়ে তিনি তার সমসাময়িক সবাইকে ছাপিয়ে উঠেছিলেন, ব্যক্তিত্বের শক্তিতে। ছোট লাট তাকে ধমক দিতে এসে নিজেই ধমক খেয়ে গেছেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে যেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, রাজনীতির ক্ষেত্রে তেমনি ছিলেন ফজলুল হক। কিন্তু তার মধ্যে বীর হবার আগ্রহটা বেশী ছিল নেতা হবার আগ্রহের তুলনায়। যে জন্য দেখা গেছে তিনি মানুষকে টেনেছেন, ভোটের ব্যাপারে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু মানুষকে সংগঠনে নিয়ে আসতে পারেননি। কৃষক প্রজা পার্টি যেমন কৃষক শ্রমিক পার্টিও তেমনি, খুবই অগোছালো, সাময়িক প্রয়োজনে গড়েছিলেন, প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার পর সেদিকে আর ফিরেও তাকাননি। নেতৃত্ব অবশ্যই দিয়েছেন; কিন্তু কোনো স্থির লক্ষ্য নিয়ে এগোননি, দোদুল্যমানতাও ছিল তার কাজে। জনগণকে যে পথের দিশা দেবেন সেটা সম্ভব হয়নি। চল্লিশে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, কিন্তু পরে সাতচল্লিশে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে তিনি আর নেতৃত্বে নেই। চুয়ান্নতে যুক্তফ্রন্টের তিনি প্রধান তিন নেতার একজন, কিন্তু বিজয়ের পর দেখা গেলো যুক্তফ্রন্টকে আর ধরে রাখতে পারছেন না।

ভাসানীর মধ্যেও বীরত্ব ছিল অসামান্য। তাকে অর্ধশিক্ষিত বলেন যারা তাদের হিসাবটা ঠিকই আছে, কিন্তু সেটা অঙ্কের হিসাব, সাহসে, অন্তর্দৃষ্টিতে ও প্রজ্ঞায় কোনো উচ্চশিক্ষিতই তার সঙ্গে তুলনীয় ছিল না, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও নন। তিনি ধমক দেবার ক্ষমতা রাখতেন এবং দিতেন। তবে তার ঝোঁকটা বীরত্বের দিকে নয়, ছিল নেতৃত্বদানের দিকে, যেখানে তিনি ফজলুল হক থেকে স্বতন্ত্র। মধ্যবিত্তের নয়, তার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মুক্তি চেয়েছেন। শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন গড়তে চেয়েছেন, তাদের একত্র করেছেন, তাদের দাবিগুলোকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু নেতা হিসাবে তার সামনেও নির্দিষ্ট কোনো পথের সন্ধান ছিল কি? ছিলেন প্রবলভাবে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, সামন্তবাদ বিরোধী, বিশ্বাস করতেন সমাজতন্ত্রে। কিন্তু কোনো স্থির লক্ষ্য ধরে যে এগিয়ে যাবেন সে কাজ তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তার কাছ থেকে তা প্রত্যাশিতও ছিল না। তাই তিনিও কোনো সংগঠন রেখে যেতে পারেননি, তার অনুসারীরা নির্দিষ্ট একটা পথ ধরে যে এগুবেন সেটা সম্ভব হয়নি।

শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একাধারে বীর ও নেতা। যেমন বীর তেমনি নেতা। বীরত্ব ছিল, ছিলেন সাহসী এবং আপোসহীন, মেরুদণ্ড ছিল শক্ত। হক ভাসানী দুই জনের তুলনাতেই তার ঝোঁক বেশী ছিল নেতৃত্বের দিকে। ফজলুল হক এবং ভাসানী যা পারেননি শেখ মুজিব তা করেছেন। তিনি একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংগঠন গড়েছেন এবং সংগঠন রেখে গেছেন। সাংগঠনিক শক্তিতে তিনি অন্য দুই জনের তুলনায় অনেক দক্ষ ছিলেন। নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য ছিল সামনে, সেটা হলো বাঙালীর জন্য অধিকার অর্জন। সেই লক্ষ্য ধরে এগিয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিব তার নেতৃত্বের জন্য দ্বিতীয় যে পরীক্ষাটি অপেক্ষা করছিল, সেটির মুখোমুখি হলেন তখন দেখা গেলো তিনি নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, পিছু হটে যাচ্ছেন, তার দৃষ্টি ঘুরে গেছে বীরত্বের দিকে। অনুরাগীরা তাকে ঘিরে ফেললো, আওয়াজ দিলো মুজিববাদের সেটি ফাঁকা ছিল বলেই উচ্চকণ্ঠ ছিল। তারা তাকে নেতার জায়গা থেকে সরিয়ে এনে বীরের স্তম্ভের ওপর দাঁড় করিয়ে দিল। তারা অবশ্য পারতো না, যদি তার নিজের সম্মতি না থাকতো। আসলে এক ধরনের সিদ্ধান্ত পঁচিশে মার্চের সেই ভয়ঙ্কর রাতেই তিনি নিয়ে ফেলেছিলেন। যার দরুন যুদ্ধের নয় মাস তিনি প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে রইলেন না। যুদ্ধে তিনি অবশ্যই ছিলেন তবে সেই অবস্থানটা যে নেতার হবে সেটা সম্ভব ছিল না, অবস্থানটা ছিল বীরের। স্বাধীনতার পরে দেখা গেলো তিনি পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন সেই সমাজতন্ত্র হবে শোষিত মানুষের এই অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু তার জন্য ওই অঙ্গীকার রক্ষা করা সম্ভবপর ছিল না। পথ ছিল না খোলা, অঙ্গীকারের অভাব ছিল। বরঞ্চ এটাই অনিবার্য ছিল যে, তিনি এমনকি সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ থেকেও সরে যাবেন, প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, রাষ্ট্রপতি হবেন এবং আয়োজন করবেন একদলীয় ব্যবস্থার।

আমরা তিনজনের কথা বললাম। আরো একজন ছিলেন যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি দেখা গিয়েছিল বড় ধরনের নেতৃত্বের। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। ভালো সংগঠক ছিলেন, চমৎকার বক্তৃতা করতেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববঙ্গের প্রথম ও একমাত্র উপনির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। সবটাই বীরত্বব্যঞ্জক। কথা ছিল নেতৃত্ব দেবারও, কিন্তু পারলেন না।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের একেবারে প্রথম দিকেই তিনি পরাজিত হয়ে গেলেন। ব্যাপারটা ব্যক্তিগত ছিল না, ছিল দলীয়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে সভা শোভাযাত্রার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা সরকার জারি করেছিল তা ভঙ্গ করা হবে না। সেই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জানাবার দায়িত্ব পড়েছিল তার ওপর, যেহেতু তিনি সংগ্রাম পরিষদের সবচেয়ে বড় অংশ যে আওয়ামী লীগ তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রসমাবেশে তিনি তা জানিয়েছেন, ছাত্ররা তাকে মানেনি। নত মুখে তিনি চলে গেছেন। বীর পারলেন না নেতা হতে। তারপরে তিনি কারাগারে বন্দী হয়েছেন। কারাগারে মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবও গেছেন বহুবার, কিন্তু প্রতিবারই তারা আগের চেয়ে উন্নত মস্তকে বের হয়ে এসেছেন। শামসুল হক পারলেন না। সাংগঠনিকভাবে নেতৃত্বে ছিলেন, কিন্তু সরে গেলেন। কারাবন্দী অবস্থাতেই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুক্ত হয়েছেন, কিন্তু সুস্থ হননি। বরঞ্চ অসুখ বেড়েছে। পরে হারিয়েই গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি বইও লিখেছেন। নেতৃত্বদানের প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু তা আর বিকশিত হলো না।

ওই যে তিনজন বড় জননেতা-ফজলুল হক, ভাসানী এবং শেখ মুজিব- এদের পরিবেশে এমন আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না যে, তারা নেতার দায়িত্ব নেবেন। তারা অসাধারণ ছিলেন, মেধায়, অনুশীলনে, সাহসে, বীর হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। তাদের জন্য; নেতৃত্বের জায়গাটা ভিন্ন, কিন্তু সেখানেও তারা অনায়াসে চলে এসেছিলেন নিজ গুণে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Monday 6 April 2009

মন না বদলালে দিন বদলাবে না

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো বিষয়ে সমঝোতা বা ঐক্য হতে পারে, এ প্রায় অকল্পনীয়। কেউ কেউ বলেন, দা-কুমড়ো সম্পর্ক দল দুটোর মধ্যে। দেশের অন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ দুটো দলের যেকোনোটির ঐক্য হতে পারে, জোট হতে পারে। কিন্তু এই প্রধান দুটি দলের ঐক্যতো দূরের কথা, কোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানোও অসম্ভব। এ যেমন সত্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে, তেমনই তৃণমূল স্তরেও। বিএনপি উত্তরে গেলে আওয়ামী লীগ যাবে দক্ষিণে। যেতেই হবে। তা না হলে দল দুটোর রাজনীতি থাকে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এমন কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যেখানে সব বিভেদ ভুলে দুটি দলই পরস্পর সহযোগী হয়ে যায়।

ঠিক এরকমই একটি খবর বেরিয়েছে গত শনিবার পত্রিকান্তরে। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় পুরোনো ঢাকায় চাঁদাবাজির প্রশ্নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চমৎকার সমঝোতা করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজদের হয়ে বিএনপির একশ্রেণীর মুখচেনা মাস্তান কাজ করে দিচ্ছে খোশমেজাজে। পাড়ামহল্লার ছোট ছোট দোকানদার-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলার কাজটা করছে তারাই। চাঁদাবাজির বেলায় তাদের কোনো বিরোধ নেই। এ ব্যাপারে পিলে চমকানো খবর আছে আরও। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাত দিনের মাথায় শোনা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিএনপি পন্থী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বিঘেœ চাঁদা তোলার বিষয়ে একমত হওয়ার জন্য এবং রফা করে নেন এ বিষয়ে। সে অনুযায়ী লালবাগে দেদারসে চলছে চাঁদাবাজি। এলাকাবাসির বিবেকবান লোকেরা বলছেন, ছাত্র এবং যুব নেতারা চাঁদাবাজির সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

এই সংবাদে মনে পড়ে গেলো কবি আবুল হোসেনের একটি কবিতার দুটো লাইন। লাইন দু’টি হচ্ছে: ‘লুটের বেলায় নেই বিভেদ, কেতাব কিংবা পড় ুক বেদ’। বাস্তবিকপক্ষেই যে বা যারা স্বভাবগতভাবে লুটেরা তাদের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন কাজে কোনো পার্থক্য নেই। আদর্শের কথাটা তাদের ছদ্মবেশ। সেটা হতে পরে ধর্মীয় কিংবা হতে পারে রাজনৈতিক আদর্শ; লুটপাট করতে এই শ্রেণীর লোকদের বাধে না। এদের বাইরের পোশাক ও সাইনবোর্ডের ব্যবধান থাকলেও তলে-তলে এরা মাসতুতো ভাই। পরস্পর সহযোগী। সব রসুনের গোড়া একটি। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী লালবাগের পরিস্থিতি তারই একটি ছোট উদাহরণ। খুঁজলে এবং তলিয়ে দেখলে এ ধরনের ছোটবড় আরও অনেক দৃষ্টান্ত যে বের করা যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

একটা কথা ঠিক যে, ক্রিমিনালদের কোনো জাত নেই, নেই দল। এদের কোনো রাজনৈতিক আদর্শও থাকার কথা নয়। থাকতে পারে না। লুটপাট এবং অপরাধকর্ম নির্বিঘেœ চালিয়ে যাবার প্রয়োজনে এরা যেকোনো অবস্থান ও ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। যেকোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকতে পারে। এদের কোনো দল নেই, রাজনীতি নেই। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই এ বিষয়টি বুঝেন না অথবা বুঝতে চান না। তারা নিশ্চয়ই নিজেদের খুব বেশী বুদ্ধিমান মনে করেন, কৌশলী হিসাবে বিবেচনা করেন। তারা হয়তো ভাবেন যে, মাস্তান ক্রিমিনালদের তারা (নেতারা) ব্যবহার করছেন। কিন্তু, কার্যত দুষ্কৃতকারীরাই যে দলের প্ল্যাটফর্মটাকে ব্যবহার করে থাকে- নেতারা সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করেন। ফলে আমাদের দেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভাইরাসের মত সক্রিয় রয়েছে মাস্তান-চাঁদাবাজরা। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, দুর্বৃত্ত-দুষ্কৃতকারীদের ছাড়া যেন চলেই না। দুর্নীতির রাজনীতির এমন পরিণতিই স্বাভাবিক।

মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের দেশে কোনো কোনো দলের এবং নেতার অবস্থা হয়ে গেছে তামাকসেবী লোকের মত। সিগারেট বা তামাকসেবী যারা, তারা বুঝেন এবং জানেন যে, এই ধোঁয়া বিষাক্ত, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিকোটিন সৌন্দর্য, সুস্থতা এবং জীবনীশক্তি শুষে নেয়। তারপরও ধূমপান সহজে ছাড়তে পারে না। রক্তে মিশে থাকা নিকোটিন তাকে বারবার সিগারেটের দিকে নিয়ে যায়। সিগারেটের কটু গন্ধ তাকে প্রতি মুহূর্তে টানে প্রবলভাবে। এই সর্বনাশা টান রক্তে মিশে থাকা নিকোটিনের। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলো, দলের কোনো কোনো নেতা-পাতি নেতা নিকোটিন সদৃশ দুষ্ট ভাইরাসের টান যেন উপেক্ষা করতে পারেন না। তারা মুখে বলেন গণতন্ত্রের কথা, মানুষের অধিকারের কথা, দেশপ্রেমের কথা, আর কাজের বেলায় উল্টো করেন। মাস্তান-চাঁদাবাজদের পোষেন, লালন করেন, পালন করেন। এদের ছাড়া যেন তাদের চলে না কিছুতেই। আর নেতাদের আশ্রয়ে থেকে তারা রাজনীতিকে কলুষিত করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

দু’ বছর আগে, ওয়ান ইলেভেনের মধ্যদিয়ে গোটা জাতি উপলব্ধি করতে পেরেছিলো যে, এদেশের রাজনীতি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে গেছে। দলগুলো রুগ্ন-কলুষিত। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি দলগুলোর অন্তরের শক্তি বিনাশ করে দিয়েছে বহুলাংশে। সেই প্রেক্ষাপটেই সর্বমহলে দাবি ওঠে রাজনৈতিক দলের সংস্কার-সংশোধনের। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যারা এই দাবি নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তাদের সবাই যে আন্তরিক ছিলেন, তা হয়তো নয়। কেউ কেউ হয়তো বাড়াবাড়িও করেছেন। কিন্তু, একথা অনস্বীকার্য যে, সাধারণ মানুষ মনেপ্রাণে চেয়েছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির শুভ পরিবর্তন। কোনো রাজনৈতিক দলে মাস্তান-দুর্বৃত্তদের স্থান হবে না, এমনটিই তারা প্রত্যাশা করেছিলেন। সচেতন নাগরিকমাত্রই চাইছিলেন যে, শিক্ষাঙ্গনে কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের উৎপাত থাকবে না। ছেলেমেয়েরা নির্বিঘেœ নির্ভয়ে লেখাপড়া করবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনে হানাহানি হবে না, ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাস রক্তে ভিজবে না, অস্ত্রের ঝনঝনানি থাকবে না। পাড়ায়-মহল্লায় ব্যবসা কেন্দ্রে চাঁদাবাজ-মাস্তানদের উৎপাত থাকবে না।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির সেই বাঞ্ছিত পরিবর্তনের জন্যেই দাবি উঠেছিলো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না রাখার। গণপ্রত্যাশার আলোকে ইলেকশন কমিশনে দল নিবন্ধনের বেলায় অঙ্গ সংগঠন না রাখার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে কথা শোনেনি দলগুলো। তারা বি-টিম হিসেবে সহযোগী সংগঠন রেখেছেন এবং তাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের ধারায় আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। রাজনৈতিক দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে আগের মত। ক্যাম্পাসে রক্তপাত, সংঘাত, হানাহানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ দেশের সর্বত্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হল দখল এবং প্রতিপক্ষ দমনের নামে চলছে নিত্যহানাহানি। গত শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে দশজন। এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অল্পকালের মধ্যে একাধিকবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর প্রায় সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। এইতো কয়েকদিন আগে বন্ধ হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ।

ছাত্র রাজনীতি, ছাত্র সংগঠন নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে অনেক লিখেছি। একথা কে অস্বীকার করবে যে, আমাদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে, প্রতিটি সংকট-সন্ধিকালে ছাত্রসমাজ তারুণ্যের শক্তি নিয়ে পালন করেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। ছাত্রদের সংগঠিত করতে, জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে এই যুবজনতার শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে ছাত্র সংগঠনগুলো, বিশেষ করে ছাত্রলীগ পালন করেছে এক অনন্য ভূমিকা। কিন্তু সেই ছাত্রলীগ কিংবা অতীতের যেকোনো ছাত্র সংগঠনের আদর্শ এবং বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এখনকার ছাত্র রাজনীতির কোনো মিল নেই। পাকিস্তান আমলে ছাত্রলীগ ছিলো আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আর এখন এই সংগঠনটি সত্যি বলতে কি দলের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মী-ক্যাডাররা মূল দলের নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ক্রীড়নক হিসাবে প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু দলের জন্য এরা অপরিহার্য নয়।

পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ যে কথা বলতে দ্বিধা করতো তা বলতো ছাত্রলীগ। প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। তখন ছাত্রলীগ অপরিহার্য হলেও এখন সে পরিস্থিতি নেই। এই ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। তবুও কেন যে আওয়ামী লীগ ছাত্র সংগঠনের ব্যাপারে নির্মোহ হতে পারছে না তা বোধগম্য নয়। ছাত্রলীগের নামে ক্যাম্পাসে রক্তপাত হবে, মাস্তানি-চাঁদাবাজি চলবে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে- তারপরেও আওয়ামী লীগ নির্বিকার থাকবে কেন, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। সংঘাত-সংঘর্ষের পর কমিটি ভেঙ্গে দেয়া বা কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে যে কোনো ফলোদয় হয় না, তাও ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কাজেই ছাত্রলীগের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান নেয়ার সময় এসেছে। এই ছাত্র সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগ সম্পর্ক ছিন্ন করলে আদৌ কোনো ক্ষতি হবে কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া বাঞ্ছনীয়।

বলছিলাম রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের কথা। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। ক্ষমতাসীনদেরই স্থাপন করতে হয় ভাল দৃষ্টান্ত, যাতে অন্যেরা তা অনুসরণ করতে পারে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গি যতক্ষণ না বদলাবে ততক্ষণ ভাল কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে পারে না। মন না বদলালে দিন বদলাবে না। দিন বদলাতে দলকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। দলের ভেতরে দুর্বৃত্ত, চাঁদাবাজ, মাস্তান যারা আছে তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। পার্টির ভেতরে দুর্র্বৃত্ত-অপরাধীদের রেখে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা যাবে না। দিনবদলের শ্লোগান শ্লোগানই থেকে যাবে। জনজীবনে পরিবর্তনের কোন হাওয়া বইবে না। (সংগৃহীত)

ভালবাসি তোমায় ( মাবিয়া আক্তার মুক্তার সৌজন্যে ফখরুল ইসলাম এর স্বরচিত কবিতা )

তোমাকে ভালবাসি,যতটুকু আমি আমাকে ভালবাসি,

পরিমাপ হীন সে ভালবাসা যাহা মোর অবর্নণীয় ।

তাইত তোমার নিকের বিচ্ছেদ হয়ে যায় অসহনীয় ।

আমার এ ভালবাসা অনুভব করেছি , প্রতিটি পলে পলে,

যখন তুমি নিকের তরে চুর আড়াঁল হলে ।

তুমি নাই তবু ও তোমার অ¯িতত্ব অনুভব করি ,

আমার হৃদয় তোমায় ডাকে, তুমি ও হৃদয়ে হৃদয়ে সাড়া দাও ,

তোমারি জন্যে গচ্ছিত আমার ভালবাসাকে স্মরি।

যখন তোমার সাড়া না পাই আমার ভালবাসার ডাকে,

রক্তাক্ত হৃদয়াপথ অবরুদ্ধ হয় প্রতিটি বাকে বাকে।

তষন আমার দুটি হাতের মুঠোয় মুঠোয় ধরে ,

স্বল্পচুলো মাথাটার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে ।

তোমাকে বিশ্বাস করি ,আইয়ুবের (আঃ) এর প্রেমের মত,

তুমি যেন রহিমার সম পূত আর পবিত্র ।

তোমাকে অবিশ্বাসের কথা ভাবিনিত কস্মিনকালে,

সন্দেহ করেছি বলে বাধলে অপবাদের জালে ।

প্রিয় জনের ভালবাসাকে সন্দেহ করা যে পাপ,

দেখলেনা তুমি আমার ভালবাসা করে পরিমাপ ।

বিধাতার নিকট করলে কেন আঁখিজলে ফরিয়াদ,

ভালবাসায় ? নাকি ঘোচাতে চেয়েছ বিধবার অপবাদ ।

রহিমা বিবির কেশর কাটানো ভালবাসার মত,

দিতে চেয়েছ কি ? তোমার ভাল লাগার অমরত্ব ।

এটা কি ছিল তোমার ভালবাসা ? নাকি শুধু অভিনয় ?

সত্যি যদি হয় তাহলে, কি করে হল তার য় ।

তুমি আসবে তাই প্রতীায় থাকি পুরো সাপ্তাহ ধরে ,

তুমি আসলে হৃদয়টা মোর শান্তিতে যায় ভরে ।

প্রতীার যেন হয়ে গেল শেষ চাতক পাখির,

বহুদিনে সে পেয়েছে দেখা বৈশাখী বৃষ্টির ।

ভালবাসি তোমায়, আমার ভালবাসায় নাইকো কোন খাদ,

হুর চাহিনা , চাই যে তোমায় করি ফরিয়াদ ।

প্রার্থনা করি আমাদের যেন মা করে দেয় প্রভু ,

ভালবাসায় খাদ খোজনা, ভুল বুঝনা কভু।

দোয়া করি যেন দুজনে মিলে সন্তানাদির তরে,

ভাল রাখে যেন আল্লাহ তাদের অনাদিকাল ধরে।

Sunday 5 April 2009

পথহারা ছাত্র রাজনীতি

০ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা থামছে না

০ ছাত্রনেতারা অপকর্মে সম্পৃক্ত

০ গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

।। আবুল খায়ের ও সাইদুর রহমান ।।

ছাত্র রাজনীতি তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হারাতে বসেছে। অতীতের ঐতিহ্য আর আদর্শকে ম্লান করে ছাত্র রাজনীতি দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব কারণে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা থামছে না। অশান্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসগুলো। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নোংরা রাজনীতির জন্য হল ও ক্যাম্পাস ছাড়া হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘাত-সন্ত্রাসই নয়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ শহর ও পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র নেতারা নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও ছাত্র-রাজনীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিব্রত। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে সাম্প্রতিককালে ছাত্রলীগের ঘটনাবলী নিয়ে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ধানমণ্ডির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লাীগের দলীয় মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যারা দুর্নীতি ও সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগের ঘটনা নিয়ে দল উদ্বিগ্ন।

১৯৯০ সালের পর থেকে ছাত্র-রাজনীতিতে এক ধরনের দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়। এ জন্য ২ দশকের বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের আগ্রাসনমূলক আচরণের কারণে ধ্বংস হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। ছাত্র-সংগঠনের সংঘর্ষে অনেক ছাত্রকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। বর্তমানে শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কার্যক্রম নয়, বিগত সরকারের আমলেও ছাত্রদল ও শিবির শিক্ষাঙ্গনে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। ছাত্র রাজনীতির নামে বর্তমানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ভর্তি বাণিজ্যসহ শহর ও পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র নেতারা নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েছে। ছাত্র রাজনীতি পুঁজি করে অনেকে কোটিপতি বনে গেছেন। ছাত্র নেতাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, ছাত্র নেতারা একজন মন্ত্রী বা এমপি’র চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন তদবির নিয়ে। তারা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে এখন আর রাজনীতি করে না। তারা নিজেদের জন্য রাজনীতি করে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান ছাত্র নেতারা দামি-গাড়িতে চড়ে মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করতে আসে।

ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য

বর্তমানে ছাত্রলীগের নোংরা রাজনীতির কারণে শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা থামছে না। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়া হয়েছে। একাধিক ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এ জন্য ছাত্র রাজনীতির ধরন ও আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনে নোংরা রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। নোংরা ছাত্র রাজনীতির নামে গত ১৪ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় একটি গ্রুপ। বিতাড়িত গ্রুপের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখোমুখি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জানুয়ারি নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জের ধরে ১৮ জানুয়ারি সেখানকার ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের পছন্দের ভিসি নিয়োগের দাবিতে ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ মার্চ শিবিরের সাধারণ সম্পাদক নিহত হওয়ার জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় শহরের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংঘাত এড়াতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী নিউ সরকারি ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। বন্ধ রয়েছে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ। গত ৩১ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডা. ফজলে রাব্বি হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আসাদ রাজীব। পরের দিন দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক ছাত্র আহত হয়। অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে খুলনা বিএল কলেজ, সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে ইতিমধ্যে তা খুলে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর উত্তেজনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ১ মাসের জন্য ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল লাগাতার ধর্মঘট ডেকে ক্যাম্পাস অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। গত শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ হলে তল্লাশী চালিয়ে ৫ জনকে আটক করে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বর্তমানে এই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে, যে কোন সময়ে আবার সংঘর্ষ বাধতে পারে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর ভর্তি বাণিজ্য

ছাত্র রাজনীতির নামে গত ১৯ বছর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়েছে। হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমান ও বিগত সময়ে মূলত ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্র সংগঠন বিভিন্নভাবে এসব কাজে উৎসাহ পেয়েছে। শুধুমাত্র ছাত্রলীগ চলতি বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-০৯ সেশনের অনার্স ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অনিয়মের নজির সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ রয়েছে, ভর্তিতে ছাত্রপ্রতি ৫০ হাজার টাকা এবং ভালো সাবজেক্টে মাইগ্রেশন করাতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে তারা। রাজধানীসহ দেশের সরকারি কলেজগুলোতে অবৈধভাবে ২০০৮-০৯ সেশনের অনার্স প্রথমবর্ষে ভর্তিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে ছাত্র নেতারা। এ কারণে রাজধানীর ইডেন, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর, কবি নজরুল, বদরুন্নেসা, সোহরাওয়ার্দী ও মিরপুর বাঙলা কলেজেও মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ পায়নি। অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়ককে চাপ দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ, রাজশাহীর সিটি কলেজ, নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী কলেজ, খুলনার বিএল কলেজ ও সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ, চট্টগ্রামের সিটি কলেজ ও কমার্স কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং বরিশালের বিএম কলেজে নিজেদের পছন্দের ছাত্র ভর্তি করেছে ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্রলীগকে কোটা দিতে অস্বীকার করায় ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ারও ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। অনার্স প্রথমবর্ষে ভর্তিতে কোটা না দেয়ায় ছাত্রলীগ ঢাকা কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। আধিপত্য জাহির করতে তারা ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ এবং মেধা তালিকায় ভর্তিচ্ছুদের মারধর করেছে। এ ছাড়া দেশের আরো বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানারকম সংঘর্ষের ঘটনা। এসব ভর্তি বাণিজ্যে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন তাদের বিরোধী ছাত্র সংগঠনকেও আর্থিক সহযোগিতা করেছে। মূলত আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য এ কাজ করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড বিব্রত

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বর্তমান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও মহাজোট সরকারের শীর্ষ মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পরেও সংঘর্ষ চলছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ক্যাডার হিসেবে খ্যাত গ্রুপটি আধিপত্য আর টাকার ভাগ-বাটোয়ারা ও দখলবাজি করতে গিয়ে খুনখারাবি করে যাচ্ছে। গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসে প্রতিপক্ষ গ্রুপ ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাজিবকে তিনতলায় তার কক্ষের সামনের বারান্দায় নির্দয়ভাবে প্রহার করে। আত্মরক্ষার জন্য রাজিব তিনতলা থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। ঘাতকরা নীচে গিয়ে রাজিবের মাথায় রড ও হকিস্টিক দিয়ে বেদম প্রহার করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। সাম্প্রতিকালে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। পরে সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে ছাত্রলীগ ক্যাডার সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে সরকার অনেকটা বিব্রত।

গোয়েন্দাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে প্রকাশ পায়, ছাত্রলীগের একশ্রেণীর নেতা চাঁদা আদায়, নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের জন্য ক্যাডার লালন-পালন করে। ছাত্র নয় এমন ক্যাডারের সংখ্যই বেশি। তারা টাকা পেলে খুনসহ যেকোন অপরাধ ঘটিয়ে থাকে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ এই সকল ক্যাডার দ্বারা করানো হচ্ছে। একটি মহল ক্যাডারদের আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এই সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টির আরো গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্যাডাররা সব সময়ই যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের দলীয় লোক সেজে যায়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধে মামলা থাকা সত্ত্বেও দলীয় সাইন বোর্ড থাকায় গ্রেফতারে পুলিশ তেমন কোন ভূমিকা পালন করেনি। তাদের গ্রেফতার করলে দলীয় নেতা-কর্মীরা থানা ঘেরাও করে কিংবা নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করে থাকে। এসব কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতারে নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করে থাকে বলে গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়। পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ বলেছেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অস্ত্রসহ জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলাকারী যেই হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করা হবে।

ছাত্র সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি

ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিক্ষাঙ্গনে সংঘর্ষ, ভর্তি বাণিজ্যের পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে সম্পৃক্ত হয়। ছাত্রদলের পথ অনুসরণ করে ছাত্রলীগও এখন এসব কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী না হওয়ায় তারা এবার সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে অবস্থিত মার্কেটসমূহ থেকে তারা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগ চাঁদাবাজির নামে ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। মিরপুর এলাকার এক ডিশ ব্যবসায়ী ইত্তেফাককে জানান, মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার কাছ থেকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী, চট্ট্গ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, শাহজালালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত টেন্ডারবাজি করছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা সবসময়ই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।

তদবিরে এগিয়ে ছাত্র নেতারা

দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর থেকে ছাত্র নেতারা তদবিরে জড়িত হয়ে পড়ে। এর জের ধরে ছাত্র নেতারা কোটিপতি বনে যান। বর্তমান ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও তদবিরের পথ অনুসরণ করেছে। ছাত্রলীগের নেতারা জানান, বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ নেতারা তদবির শুরু করেছে। এ জন্য কোন্ পদে কতজন লোক নেয়া হবে তা বিবেচনা করে তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকায় মেধার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনায় টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগ করা হবে। বিগত বিএনপি-জোট আমলে ছাত্রদলের অনেক নেতা তদবির করে কোটিপতি হয়েছে। বর্তমানের ছাত্র নেতারা সাংগঠনিক কাজের চেয়ে তদবিরকে উৎকৃষ্ট মনে করছে। তদবিরে সরকারের মন্ত্রীদের ছাত্র নেতারা ভুল বুঝিয়ে থাকে। দলীয় লোক নেয়ার কথা বলে মন্ত্রীর কাছ থেকে তারা কোটা নিয়ে ব্যবসা করে। গত কয়েক বছর যেসব চাকরি হয়েছে তার অধিকাংশ ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে। এ জন্য তদবিরে সব সময় ছাত্র নেতারা এগিয়ে থাকেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর উৎসাহ

ছাত্র সংগঠনগুলোকে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিতে টেনে আনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করা হয়ে থাকে। বিগত বিএনপি-জোট আমলে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে চা বাবদ তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান প্রতিমাসে দুই লক্ষ টাকা খরচ দিতেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে মধুর ক্যান্টিনের চা খরচ বাবদ মোটা অংকের টাকা দিচ্ছে। এসব খরচ দিয়ে প্রকারান্তরে রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ আর্থিক সহযোগিতার কারণে ছাত্র সংগঠনগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিশিষ্টজনদের ভাবনা

শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছাত্র রাজনীতির আদর্শ ফিরিয়ে আনা জরুরি। ছাত্র রাজনীতিকে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র-সংসদ চালু করতে হবে। তারা বলেন, কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও শিক্ষার পাঠ না চুকিয়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এর একমাত্র কারণ ঐ সংঘর্ষের ছাত্র রাজনীতি। অথচ বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে শুরু করে আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তখন দেশের সকল জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা রাখত।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছাত্র রাজনীতি বর্তমানে কলুষিত হয়ে পড়েছে। ছাত্ররা আদর্শ বিচ্যুত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্মে, যা কখনো রাজনীতি হতে পারে না। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি মানে তারা নিজেদের অধিকার আদায়, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, শিক্ষা বিষয়ক আন্দোলন করবে। যা আগে ছিল, কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। দলীয় লেজুড়বৃত্তির পাশাপাশি লেজের ভেতরেও তারা লড়াই করছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই এটম বোমার মুখেও বেঁচে আছেন তিনি!


ব্যবসায়ের কাজে গিয়েছিলাম হিরোশিমাতে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে ট্রাম থেকে হিরোশিমায় নামি। আমার কোম্পানির হিরোশিমা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গাড়ি থেকে তারা আমাকে রিসিভ করবেন। কিন্তু তাদের পরিবর্তে আমাকে রিসিভ করল মার্কিন বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে ফেলা এটম বোমা ‘লিটল বয়’! মুহূর্তেই সব এলোমেলো। কি হয়েছে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিহত হয় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক। জ্ঞান ফিরে পাবার পর বুঝতে পারি চোখের আলো হারিয়েছি, কানের পর্দার শোনার ক্ষমতা শেষ, শরীরের ওপরের অংশ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, যেখানে হাত দিচ্ছি সেখান থেকেই চামড়া উঠে আসছে। বুঝলাম মৃত্যু খুব কাছে। সেভাবেই পড়ে ছিলাম দুই দিন। কিন্তু বেঁচে আছি দেখে কোন রকমে হিরোশিমা সিটি সেন্টারে গিয়ে ট্রেনে চড়ে আমার বাড়ি নাগাসাকির দিকে রওনা হই। বাড়ি পৌঁছতে না পৌঁছতেই ৯ আগস্ট আমার শহরে নিক্ষিপ্ত হয় দ্বিতীয় এটম বোমা ‘ফ্যাট ম্যান’। আমার ঘরের মধ্যে যখন রেডিয়েশনের সাদা ধবধবে আলো প্রবেশ করে তখন মনে করেছিলাম হিরোশিমায় বোমার মুখে পড়ার পর দুঃস্বপ্ন দেখছি মনে হয়। কিন্তু আবার আহত হলাম এবং জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখিনি। এটা ছিল আরো একটি এটম বোমা! দ্বিতীয় বোমার আঘাতে নিহত হয় ৭০ হাজার লোক। দুই বোমার আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী পার্শ¦প্রতিক্রিয়ায় অনেক লোক মারা গেছে। কিন্তু বেঁচে আছি আমি!
এই অতিভাগ্যবান ‘আমি’ হচ্ছেন জাপানের ৯৩ বছর বয়সী সুতোমু ইয়ামাগুচি। ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মিৎসুবিশি কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসাবে চাকরি করতেন। কোম্পানির কাজে হিরোশিমায় গিয়ে ৬ আগস্ট প্রথম এটম বোমার মুখে পড়েন। কিন্তু সেখান থেকে রক্ষা পেয়ে নাগাসাকিতে ফিরতে না ফিরতেই তার ভাগ্যে জোটে দ্বিতীয় এটম বোমার তিক্ত অভিজ্ঞতা। দুই এটম বোমার মুখে পড়ে বেঁচে যাওয়া একমাত্র জাপানি হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। হিরোশিমা এবং নাগাসাকির প্রশাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এটম বোমার রেডিয়েশন থেকে বেঁচে যাওয়া নারী-পুরুষদের তালিকা তৈরি করেছে। তাদের মেডিক্যাল চেক-আপ, চিকিৎসা ও দাফন সংক্রান্ত খরচ সরকার বহন করবে। কিন্তু সুতোমু ইয়ামাগুচির তালিকা করতে গিয়ে সরকার বিপাকে পড়ে যায়। কারণ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার নাম হিরোশিমা এবং নাগাসাকি প্রশাসনের তালিকায় ওঠে! সুতোমু ইয়ামাগুচি দাবির প্রেক্ষিতে সরকার তদন্তে নামে। এরপর সরকার সত্যিই মেনে নেয় যে, ইয়ামাগুচি যে দাবি করছেন তা সত্য। এখন উভয় শহরের এটম বোমার শিকার হওয়াদের তালিকায় তার নাম উঠেছে। এরপর তিনি বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হন। বর্তমানে তিনি নাগাসাকিতে তার একমাত্র কন্যার সঙ্গে বাস করছেন। কন্যার বয়স এখন ৬০ বছর। শরীরের ঘায়ের দাগ এখনো শুকায়নি। তবে চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন এবং এক কানে শুনতে পান। ইয়ামাগুচি বলেছেন, যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন তিনি নতুন প্রজন্মকে শান্তির পথে চলার আহ্বান জানাবেন। এটম বোমার মতো ভয়াবহ দানবের বিপক্ষে অবস্থান নিতে অনুরোধ করবেন।(সংগৃহীত)

Friday 3 April 2009

স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে বিতর্ক

বাংগালী জাতী কখনো উন্নতি করবে এ কথা বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়না।যে জাতি তাদের স্বাধীনতার ঘোষক ক? ৩৭ বছরেও নির্ধারন করতে পারেনি,তাদের উন্নতি কল্পনা করা যায় কি?অথবা প্রকৃত ঘোষক কে সবাই জানলেও ইচ্ছা করেই একজনের কৃতত্বকে চাপা দিতে অন্যজনে তা অস্বীকার করছে।আবার প্রকৃত তারিখ কোনটি সে নিয়েও বিতর্ক বিদ্যমান। তারিখটা ২৬ ছিল নাকি ২৭ ছিল তা আজও এ জাতী জানেনা।জানেনা এ কথা ঠিক নয়, আসলে সবাই তাদের মনগড়া ইতিহাস রচনা করতে ব্যস্ত বিধায় যে যার মত করে তারিখটিকে বিকৃত করে যাচ্ছে। আওয়ামী পন্থীরা দাবী করে শেখ মুজিব ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা করে।তার বরাদ দিয়ে ২৭শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র হতে আওয়ামী নেতা আবদুল মান্নান আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়। আবার বি এন পি পন্থীরা দাবী করে,জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে ২৬ তারিখ স্বতস্ফুর্তভাবে কারো অনুপ্রানিত না হয়ে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়। এ দুটি মতের কোনটি সত্য? বাংগালী জাতীর সবাই জানে ২৫ তারিখ রাত্রে বারোটার আগে শেখ মুজিব পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।
সেখ মুজিবকে বন্দী করতে তাদের একটুও কষ্ট হয়নি,পুর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহী নেতা পালাতে চেষ্টা করেনি।নিজ ঘরে বসে থেকে আত্বসমর্পন করে পাকিস্তানিবাহিনীর হাতে।আওয়ামীদের বক্তব্য যে, শেখ মুজিব বন্দী হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষনার বক্তব্য লেখে যায়,এবং ঘোষনার নির্দেশ দিয়ে যায়,সেই নির্দেশ মতে আবদুল হান্নান চট্টগ্রাম এ স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়।বক্তব্যটা কতটুকু যৌক্তিক হতে পারে সেটা ভাবার প্রয়োজনীয়তা আছে। ২৫ তারিখে বন্ধী একজন লোক স্বাধীনতার ঘোষনা লিখে বারোটার মধ্যে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিল?যুক্তির কষ্টি পাথরে এটা অত্যন্ত হাস্যকর নয় কি?একটা স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র বন্ধীর হাত হতে পাচার হয়ে চুড়ান্ত রুপ পেতে যাচ্ছে আর পাকিস্তানী বাহীনি তাতে কিছুই বলেনি,বরং সহযোগীতা করছে এটা কল্পনা করা যায়না।ধরে নিলাম পাকিস্তানি বাহিনি কখন হামলা করবে,কখন স্বাধীনতা ঘোষনা করতে হবে তার দিনক্ষন না জেনেও মুজিব সাহেব একটা ঘোষনাপত্র আগে থেকে লিখে রেখেছেন,পাঠিয়ে দেননি,তৎকালীন বাংলাদেশের যোগাযগের যে বেহাল অবস্থা ছিল তা কিছুতেই ২৫ তারিখে রাত বারোটার মধ্যে জিয়াউর রহমানের হাতে পৌঁছানো সম্ভব নয়।আর আগে থেকে পাঠিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে এই পত্র কখনো জিয়ার হাতে যাওয়ার কথা নয় বরং তা কোন রাজনৈতিল নেতার হাতে যাওয়ার কথা।আওয়ামীরা বলে থাকে আবদুল হান্নান ২৭ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন,এ কথা সার্বজনীন ভাবে মিথ্যা ও বিকৃত,কেননা মুজিবের জীবদ্দশায় কখনো ২৭ তারিখে এ দিবস পালন করেননি।
১৯৭২ হতে ১৯৭৫ এর চারটি স্বাধীনতা দিবস মুজিবুর রহমান উদযাপন করেছেন,তার কোন বক্তৃতায় পাওয়া যাবেনা যে তিনি ঘোষনাপত্র লিখে আবদুল হাননানকে পাঠিয়েছেন এবং সেমতে হান্নান সাহেব পাঠ করেছেন।অবশ্যই নিজের কৃতীত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে জিয়ার কথাও তিনি বলেননি।শেখ মুজিবুর রহমান বলেন আর নাই বলেন,এদেশের মানূষ যারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জিবন বাজি রেখে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন তারা সেদিন কার ঘোষনা শুনেছেন?তারা শুনেছেন জিয়াউর রহমানের কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষনা।শেখ মুজিবুর রহমান কোন ঘোষনাপত্র পাঠান নাই এবং নির্দেশ ও দেন নাই,দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধ বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষনা দিয়েছেন।
তাঁর ঘোষনায় তিনি মুজিবের পক্ষ হতে কথাটি উল্লেখ করেছেন এ জন্য যে মুজিব তিনি বাংলার তৎকালীন নেতা হিসাবে সম্মানিত করতে চেয়েছেন মাত্র। বর্তমান ইতিহাস বিকৃতির দুঃসময়ে সেদিনকার বক্তব্যে জিয়ার সব চেয়ে বড় ভূল ছিল মুজিবের পক্ষ শব্দটি ব্যবহার করা.

ভারত বুভুক্ষু দেশের তালিকায়

অনাহারে থাকা দেশগুলোর তালিকায় আবারও ভারতের নাম উঠে এসেছে । সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা আই.এফ.পি.আর.আই এর একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৮৮ টি বুভুক্ষু দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৬৬ নম্বরে রয়েছে। ভারতে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশে । এরপরই বিহার ও ঝাড়খন্ডের নাম আছে । তবে কেরালা ও পাঞ্জাব একটু ভাল অবস্থানে রয়েছে। খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি, সুষম বন্টনের অভাব ও মজুতদারির ফলেই খাদ্যে স্বয়ম্ভর হওয়া সত্ত্বেও ভারতের এমন দুর্দশা বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বছরের পর বছর আর্থিক দিক দিয়ে অগ্রগতি ঘটলেও গরীব ভারতীয়রা এ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না । এক্ষেত্রে ভারতের স্থান আফ্রিকার দেশগুলোরও পিছনে । অন্যদিকে, জাতি সংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন বা ফাও এক মতামত জরিপ রিপোর্টে জানিয়েছে, খাদ্যশস্যের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকার ফলে ভারতের অন্তত ৫০ কোটি মানুষের খাদ্যাভাবের আশঙ্কা রয়েছে । এর ফলে অর্ধাহারে অনাহারে থাকা মানুষের পরিসংখ্যানটি খুব শীঘ্রই উদ্বেগজনক হয়ে উঠবে বলে ঐ রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে । ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন বা ফাওয়ের প্রতিনিধি গ্যাভিন ওয়াল বলেছেন, এই মুহুর্তে ভারতে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়েও বেশি । এমনকি পাকিস্তানও ভারতের থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে । ২০০৯ সালে কোন দেশের সার্বিক চিত্র বিশেষত রাজনৈতিক এবং আর্থিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে । এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের কনসালটেন্সি ফার্ম এক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেছে। সে রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মাথার ওপরে সঙ্কটের খড়গ ঝুলছে । বলা হয়েছে, সে দেশের আগামী লোকসভা নির্বাচনে যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।

মুরাদপুর ইউনিয়নের তথ্য:


আয়তন


এই ইউনিয়নের আয়তন ৫৩৩৫ একর (২১,.৫৯বর্গ কিলোমিটার) ।

অবস্থান


এই ইউনিয়নের পুর্ব দিকে সাবেক ৩ নং সীতাকুন্ড ইউনিয়ন বর্তমান পৌরসভা, পুর্ব দক্ষিনে ৫ নং বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন, দক্ষিনে ৫ নং বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন, পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের সন্ধিপ চ্যানেল ও সন্ধিপ উপজেলা. উত্তরে ১ নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন উত্তর পুর্ব দিকে ৩ নং সীতাকুন্ড ইউনিয়ন বর্তমান পৌরসভা।

প্রশাসনিক এলাকা


ভাটেরখীল,গোলাবাড়ীয়া,গুলিয়াখালী,মুরাদপুর,গোপ্তাখাল

সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়


বসরত নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটেরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুলিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরাদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপ্তাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেশকার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দোয়াজীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদেক মাস্তান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন রহমতনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়


ভাটেরখীল কমিউনিটি সেন্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসরত নগর কিন্ডার গার্টেন, জুয়েল মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্টেন, হাসনাবাদ রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢালিপাড়া স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাষ্টার মনিরুজ্জামান একাডেম
]

উচ্চ বিদ্যালয়


হামিদুল্লাহ হাট উচ্চ বিদ্যালয়, ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়, ভাটেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়।

মাদ্রাসা


হযরত ওমর ফারুখ (রা:)মাদ্রসা গোলাবাড়ীয়া, বায়তুর নুর দাখিল মাদ্রাসা মুরাদপুর, মদিনাতুল উলুম ইসলামীয়া মাদ্রাসা দোয়াজীপাড়া (খারেজী)

কৃতী ব্যক্তিত্ব


মরহুম প্রফেসর নুরুল আবছার আওলিয়া, মরহুম প্রফেসর নজির উদ্দিন আহমদ, মরহুম এম আর সিদ্দিকী, এল কে সিদ্দিকী, সাবেক আইজি বুরহাব উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব নুরুন্নবী চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, সিরজুল হক ভুইয়া, ফোরখ আহাম্মদ ভুইয়া, মরহুম জামাল উল্যা সাহেব, মরহুম নুরুল আলম দারোগা, জসিম উদ্দিন মাহমুদ,জসিম উদ্দিন আহমেদ, মেজর মন্জুরুল আলম শান্তি, মেজর শমসুল আমিন, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, মেজর ফখরুদ্দিন আহমদ, মিজানুল হক কেরানী, সিনিয়ার রেলওয়ে পরিদর্শক মরহুম নুরুল ইসলাম টি টি ই, সাবেক বাখরাবাদ গ্যাসের ডাইরেক্টর জেনারেল নাসিরুদ্দিন আহমেদ, ফয়েজ উল্যাহ বি এ, আবদুল্যা আল বকের ভুইয়া

হাট বাজার
মুরাদপুর বাংলা বাজার

মসজিদ


বসরতনগর জামে মসজিদ, উত্তর ভাটেরখীল জামে মসজিদ, ফি দ্বীনিল্লাহ জামে মসজিদ, বকসি সরদার জামে মসজিদ, শেখ আলী হাজী জামে মসজিদ, পুর্ব ভাটেরখীল জামে মসজিদ, পশ্চীম গোলাবাড়ীয়া জামে মসজিদ, পুর্ব গোলাবাড়ীয়া জামে মসজিদ, গুলিয়াখালী জামে মসজিদ, বায়তুর মামুর জামে মসজিদ, পশ্চীম মুরাদপুর জামে মসজিদ, সরদার জামে মসজিদ, দক্ষিন মুরাদপুর জামে মসজিদ, চৌধুরী জামে মসজিদ, হাসনাবাদ জামে মসজিদ, গোপ্তাখালী জামে মসজিদ, ভঙ্গান শাহ জামে মসজিদ, পেশকারপাড়া জামে মসজিদ, দোয়াজীপাড়া জামে মসজিদ, উকিলপাড়া জামে মসজিদ, সাদেক মাস্তান জামে মসজিদ, ঢালিপাড়া জামে মসজিদ, বায়তুর রিদোয়ান জামে মসজিদ, দক্ষিন রহমত নগর জামে মসজিদ

মন্দির


কয়েল বাড়ী মন্দির ভাটেরখীল,জেলেপাড়া মন্দির গুলিয়াখালী, দক্ষিন মুরাদপুর কালাচান মন্দির,নন্দিনি ডাক্তার বাড়ী মন্দির, পশ্চিম মুরাদপুর জেলেপাড়া দুর্গা মন্দির,পুর্ব মুরাদপুর দাসপাড়া মন্দির

চেয়ারম্যান এর দায়ীত্বে যারা ছিলেন


মরহুম আব্দুল বারিক মাষ্টার ১৯০৫-১৯৩৩ ইং প্রেসিডেন্ট ই:বোর্ড। মরহুম হাজী সিরাজুল হক ভুইয়া ১৯৩৩- ১৯৫২ইং প্রেসিডেন্ট ই:বোর্ড। মরহুম ফোরক আহাম্মদ ভুইয়া ১৯৫২- ১৯৫৭ প্রেসিডেন্ট ই:বোর্ড। মরহুম আমিনুর রহমান ভুইয়া ১৯৫৭- ১৯৬২ ইং প্রেসিডেন্ট ই:বোর্ড। মরহুম হাজী মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী ১৯৬২- ১৯৬৫ চেয়ারম্যান ই:কাউন্সিল। মরহুম আব্দুল্লাহ বি এ ১৯৬৫- ১৯৬৯ ইং চেয়ারম্যান ই:কাউন্সিল। মরহুম হাজী মিজানুক হক ভুইয়া ১৯৬৯ - ১৯৭১ ইং চেয়ারম্যান ই:কাউন্সিল। মরহুম নুরুল আমিন চৌধুরী ১৯৭১ - ১৯৭৩ চেয়ারম্যান ই:পঙ্চায়েত। মরহুম মৌ শাসুল হক ১৯৭৩ - ১৯৭৪ চেয়ারম্যান ই:রিলিপ কমিটি। মরহুম শেখ মো ফয়েজ উল্লাহ বি এ ১৯৭৪- ১৯৭৭ইং চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। শহীদ নুরুল ইসলাম ভুইয়া ১৯৭৭- ১৯৭৮ ইং চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। জনাব রুহুল আমীন ১৯৭৮-১৯৮০ চেয়ারম্যান ই:পরিষদ।(ভারপ্রাপ্ত) জনাব নুরুল আমীন চৌধুরী ১৯৮০-১৯৮৪ চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। জনাব আবুল কালাম ১৯৮৪ - ১৯৮৮ চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। জনাব রুহুল আমীন ১৯৮৮- ১৯৯৯২ ইং চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। জনাব আবুল কালাম ১৯৯২ - ১৯৯৭ ইং চেয়ারম্যান ই:পরিষদ। জনাব গোপরান বাহার ১৯৯৮ - অদ্যাবদি।

নিবন্ধনকৃত ক্লাব


গোলাবাড়ীয়া ক্লাব, মুরাদপুর ক্লাব, উদয়ন ক্লাব, একতা ক্লাব
অনিবন্ধনকৃত ক্লাব
বসরতনগর ক্লাব, ভাটেরখীল রেনেসা ক্লাব, গুলিয়াখালী সিংহ ক্লাব,হাসনাবাদ ক্লাব,গোপ্তাখালী বনলতা ক্লাব,দোয়াজীপাড়া ক্লা পাঠাগার
গোলাবাড়ীয়া ইসলামী সমাজ কল্যান পরিষদ পাঠাগার।

সমিতি


গোলাবাড়ীয়া চাকুরীজীবি সমিতি

সাস্থ্য কেন্দ্র


গোলাবাড়ীয়া সাস্থ্য কেন্দ্র/ মুরাদপুর সাস্থ্য কেন্দ্র।

সাইক্লোন সেল্টার


বসরতনগর সাইক্লোন সেল্টার, হামিদুল্লাহাট সাইক্লোন সেল্টার, ভাটেরখীল সাইক্লোন সেল্টার, গোলাবাড়ীয়া সাইক্লোন সেল্টার, গুলিয়াখালী সাইক্লোন সেল্টার, মুরাদপুর সাইক্লোন সেল্টার, গোপ্তাখালী সাইক্লোন সেল্টার, সাদেক মস্তান সাইক্লোন সেল্টার।

নির্বাচনী কেন্দ্র:


বশরতনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
ভাটেরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
গুলিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
ক্যাপ্টেন শামসুল হদা উচ্চ বিদ্যালয়,
মুরাদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
হাসনাবাদ কমিউনিটি সেন্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়,
পেশকারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
সাদেক মস্টান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,
দক্ষিন রহমতনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,

ট্রান্জিট ও বাংলাদেশ


বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দাবীদাওয়া ও আব্দার যেন μমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এতদনি যে দাবীগুলো তারা মুখে আনতে সাহস পায়নি এখন তা নিয়ে বাংলাদেশের উপর অবিরাম চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। শেখ মুজিবুর রহমান এর হাত দিয়ে তারা বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে । প্রতিদানে কথা ছিল তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশকে দিবে। কিন্তু সেটি দেয়নি। আঙরপোতা, দহগ্রামের ন্যায় বহু বাংলাদেশী ছিটমহল এখনও ভারতের কাছে জিম্মি। ভারত সেগুলিতে যাওয়ার করিডোর দিতে নারাজ। এখন তারা জোরে সোরে চাইছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট যা দিয়ে তারা পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলিতে যাবে। এটি চাইছে প্রতিবেশীর প্রতি পারস্পরিক সহযোগিতার দোহাই দিয়ে। অথচ এমন সহযোগিতা কোন কালেই তারা প্রতিবেশীকে দেয়নি। একাত্তরের যুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়। ফলে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটছিল বন্দরে মালামাল বোঝাই ও উত্তোলনের কাজে। এতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। দেশে তখন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। ছিল নিতান্তই দুঃসময়। বাংলাদেশের জন্য চট্রগ্রাম বন্দরটিই ছিল মূল বন্দর। এমন দুঃসময়ে অন্য কেউ নয়, ভারতের অতি বন্ধুভাজন শেখ মুজিবুর রহমান অনুমতি চেয়েছিলেন অন্ততঃ ৬ মাসের জন্য কোলকাতার বন্দর ব্যবহারের। তখন ভারত সরকার জবাবে বলেছিল ৬ মাস কেন ৬ ঘন্টার জন্যও বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেয়া যাবে না। এটিকেও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেছিল। প্রতিবেশী সুলভ সহযোগিতার বুলি তখন নর্দমায় স্থান পেয়েছিল।

প্রতিবেশীর প্রতি ভারতের এমন অবন্ধু-সুলভ আচরন নিত্যদিনের। প্রতিবেশী নেপাল ও ভূটানের সাথে বাণিজ্য চলাচল সহজতর করার জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট চেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপাল চেয়েছিল মংলা বন্দর ব্যবহারের লক্ষ্যে ভারতের উপর দিয়ে মালবাহি ট্রাক চলাচলের ট্রানজিট। ভারত সে দাবি মানেনি। অথচ সে ভারতই চায় বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রায় ছয় শত মাইলের ট্রানজিট। ফলে বুঝতে কি বাঁকি থাকে, পারস্পারিক সহযোগিতা বলতে ভারত যেটি বুঝে সেটি হলো যে কোন প্রকারে নিজের সুবিধা আদায়।
প্রতিবেশীর সুবিধাদান নয়। কথা হলো, বাংলাদেশের জন্য ১৭ কিলোমিটারের ট্রানজিট যদি ভারতের জন্য নিরাপত্তা-সংকট সৃষ্টি করে তবে সে যুক্তি তো বাংলাদেশের জন্যও খাটে। তাছাড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ভারতের সৃষ্ট ষড়যন্ত্র নতুন নয়। আওয়ামী লীগের টিকেট পিরোজপুর থেকে দুই-দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতার ভারতে গিয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন গড়ে তুলেছে সত্তরের দশক থেকেই। ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত এসব সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া দূরে থাক তাদেরকে নিজভূমি
ব্যবহারের পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে। এসব কি প্রতিবেশী-সুলভ আচরণ? অথচ সে ভারতই এখন দাবি তুলেছে আসামের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। অথচ অনুপ চেটিয়া এখনও বাংলাদেশের জেলে। চিত্তরঞ্জন সুতারের ন্যায় তার ভাগ্যে বাংলাদেশের মাটিতে জামাই আদর জুটেনি। ঘাঁটি নির্মান, সামরিক প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশের ভূমি থেকে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনার সুযোগও জুটেনি। বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট বা করিডোর যে কতটা আত্মঘাতি সে বিষয়ে বিষদ আলোচনা হওয়া দরকার। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত জুড়ে ভারতের সাতটি প্রদেশ। এগুলো হলো, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, অরুনাচল, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম। এ রাজ্যগুলির জন্য এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এক). সমগ্র এলাকার আয়তন বাংলাদেশের চেয়েও বৃহৎ অথচ অতি জনবিরল।
দুই) সমগ্র এলাকাটিতে হিন্দুরা সংখ্যালঘিষ্ট। ফলে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ নিয়ে সমগ্র উপমহদেশে যে রাজনৈতিক সংঘাত ও উত্তাপ এ এলাকায় সেটি নেই। ফলে এখানে বাংলাদেশ পেতে পারে বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী যা তিন দিক দিয়ে ভারত দ্বারা পরিবেষ্ঠিত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিন). একমাত্র ব্রিটিশ আমল ছাড়া এলাকাটি কখনই ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল না, এমনকি প্রতাপশালী মুঘল আমলেও নয়। হিন্দু আমলে তো নয়ই। ভারতভূক্ত হয় ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে। ভারতীয়করণ প্রক্রিয়া সেজন্যই এখানে ততটা সফলতা পায়নি। গণভিত্তি পায়নি ভারতপন্থি রাজনৈতিক দলগুলি।
চার). সমগ্র এলাকাটি শিল্পে অনুনড়বত এবং নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। অথচ এলাকাটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ভারতের সিংহভাগ তেল, চা, টিম্বার এ এলাকাতে উৎপাদন হয়। অথচ চা ও তেল কোম্মানীগুলোর হেড-অফিসগুলো কোলকাতায়। কাঁচামালের রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলিও এলাকার বাইরের।ফলে রাজস্ব আয় থেকে এ এলাকার রাজ্যগুলি বঞ্চিত হচ্ছে শুরু থেকেই। শিল্পোনড়বত রাজ্য ও শহরগুলো অনেক দূরে হওয়ায় পণ্যপরিহন ব্যয়ও অধিক। ফলে সহজে ও সস্তায় পণ্য পেতে পারে একমাত্র উৎস বাংলাদেশ থেকেই। ট্রানজিট দিলে সে সুযোগ হাতছাড়া হতে বাধ্য।
পাঁচ) যুদ্ধাবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্ত এ এলাকায় সে সুযোগ ভারতের নেই। ভারতের সাথে এ এলাকার সংযোগের একমাত্র পথ হলো পার্বত্যভূমি ও বৈরী জনবসতি অধ্যুষিত এলাকার মধ্য অবস্থিত ১৬ কিলোমিটার চওড়া করিডোর। এ করিডোরে স্থাপিত রেল ও সড়ক পথের কোনটাই নিরাপদ নয়। ইতিমধ্যে শত শত সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির সেখানে প্রাণনাশ হয়েছে।
ছয়). নৃতাত্বিক দিক দিকে তারা মাঙ্গোলিয়। ফলে মূল ভারতের অন্য যে কোন শহরে বা প্রদেশে পা রাখলেই একজন নাগা, মিজো বা মনিপুরি চিহ্নিত হয় বিদেশী রূপে। তারা যে ভারতী নয় সেটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য এ ভিন্নতায় যথেষ্ট। এ ভিন্নতায় জন্যই সেখানে স্বাধীন হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ চলছে বিগত প্রায় ৬০ বছর ধরে। ভারতীয় বাহিনীর অবিরাম রক্ত ঝরছে এলাকায়। বহু চুক্তি, বহু সমঝোতা, বহু নির্বাচন হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার সে যুদ্ধ না থেমে বরং দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভারতের অর্থনৈতিক রক্তশূণ্যতা। সমগ্র এলাকা হয়ে পড়েছে ভারতের জন্য ভিয়েতনাম। ভারত ট্রানজিট চাচ্ছে পণ্য-পরিবহন ও আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দোহাই দিয়ে। বিষয়টি কি আসলেই তাই? মেঘালয়, ত্রিপুরা,অরুনাচল, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের সমুদয় জনসংখ্যা ঢাকা জেলার জনসংখ্যার চেয়েও কম। এমন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির জন্য পণ্যসরবরাহ বা লোক-চলাচলের জন্য এত কি প্রয়োজন পড়লো যে তার জন্য অন্য একটি প্রতিবেশী দেশের মধ্য দিয়ে করিডোর বা ট্রানজিট চাইতে হবে? যখন তাদের নিজের দেশের মধ্য দিয়েই ১৭ কিলোমিটারের প্রশস্ত করিডোর রয়েছে? এ করিডোর দিয়ে একটি নয়, ডজনের বেশী রেল ও সড়ক পথ নির্মাণ করা যেতে পারে। এলাকায় নির্মিত হতে পারে বহু বিমান বন্দর। ভারতের সে দিকে খেয়াল নাই, দাবী তুলেছে বাংলাদেশের মাঝ খান দিয়ে যাওয়ার পথ চাই-ই। যেন কর্তা ব্যক্তির তোগলোকি আব্দার। গ্রামের রাস্তা ঘুরে যাওয়ায় রুচি নেই, অন্যের শোবার ঘরের ভিতর দিয়ে যেতেই হবে। গ্রামের ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তায় পথ চলতে অত্যাচারি কর্তার ভয় হয়। কারণ তার কুর্মের কারণে শত্র“ও বেশী। না জানি কখন কে হামলা করে বসে। একই ভয় চেপে বসেছে ভারতীয়দের মাথায়। সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতে তারা চিহ্নিত হয়েছে উপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী রূপে। জনগণ চায় ভারতীয় শাসন থেকে আশু
মুক্তি। এ লে জানবাজি রেখে তারা যুদ্ধে নেমেছে। ফলে ভারতের জন্য অবস্থা অতি বেগতিক হয়ে পড়েছে। একদিকে কাশ্মীরের মুক্তিযুদ্ধ দমনে যেমন চার লাখেরও বেশী ভারতীয় সৈন্য অন্তহীন এক যুদ্ধে আটকা পড়ে আছে তেমনি দুই লাখের বেশী সৈন্য যুদ্ধে লিপ্ত উত্তর-পূর্ব এ ভারতে। যুদ্ধাবস্থায় অতিগুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে যতই এ যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে ততই জোরদার হচ্ছে এ করিডোরের দাবী। তাই ভারত এখন দিশেহারা। বাংলাদেশে স্বৈরাচারি বা নির্বাচিত যে সরকাররই আসুক না কেন তারা তাদের
যে কাছে যে দাবীটি অতি জোরালো ভাবে পেশ করছে তা হলো এই ট্রানজিটের দাবী। এ বিষয়টি কি বুঝতে আদৌ বাঁকি থাকে, ভারত করিডোর চাচ্ছে নিতান্তই সামরিক প্রয়োজনে? আর বাংলাদেশের জন্য শংকার কারণ মূলত এখানেই। ভারত তার চলমান রক্তাত্ব যুদ্ধে বাংলাদেশকেও জড়াতে চায়। কারো ঘরের মধ্য দিয়ে পথ চললে সে পথে কিছু ঘটলো সহজেই সেটির দায়-দায়িত্ব ঘরের মালিকের ঘাড়ে চাপানো যায়। তার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা ঠুকা যায়। কিন্তু বিজন মাঠ বা ঝোপঝাড়ের পাশে সেটি ঘটলে আসামী খুঁজে পাওয়াই দায়। ভারত এজন্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৬ শত মাইলের করিডোর এবং সে করিডোরের নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশের কাঁধে চাপাতে চায়। তখন এ পথে ভারতীয়দের উপর হামলা হলে বাংলাদেশকে সহজেই একটি সন্ত্রাসী দেশ রূপে আখ্যায়ীত করে আন্তর্জাতিক মহলে নাস্তানাবুদ করা যাবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতেও তোলা
যাবে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভারত সরকারের কাছে যে কতটা মূল্যহীন ও তুচ্ছ সেটি বোঝানোর জন্য এ তথ্যটিই কি যথেষ্ট নয়? বহুবার তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ইচ্ছামত গরুবাছুড়ও ধরে নিয়ে গেছে। বাঁধ দিয়ে সীমান্তের ৫৪টি যৌথ নদীর পানি তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের মতামতের তোয়াক্কা না করেই। ফারাক্কা নির্মান করেছে এবং পদ্মার পানি তুলে নিয়েছে এক তরফা ভাবেই। সুরমা, কুশিয়ারা ও তিস্তার উপর উজানে বাঁধ দিয়ে এ নদীগুলোকে পানি শূণ্য করার ষড়যন্ত্র
করছে। এদের মুখে আবার প্রতিবেশী মূলক সহযোগিতার ভাষা? ভারতের এমন আগ্রাসী ভূমিকার কারণ ভারতবিরোধী চেতনা এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বেতনভোগী র’এর এজেন্ট দিয়ে এমন চেতনাধারিদের দমন অসম্ভব। সেটি ভারতও বুঝে। তাই চায়, বাংলাদেশ সরকার ভারত বিরোধীদের শায়েস্তা করতে বিশ্বস্ত ও অনুগত
ঠ্যাঙ্গারের ভূমিকা নিক। দেশের প্রতিরা বাহিনী সীমান্ত ছেড়ে কামানের নলগুলি নিজ দেশের জনগণের দিকে তাক করুক। ট্রানজিট দিলে তেমন একটি যুদ্ধাবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে বাধ্য। তখন দেশটি পরিণত হবে আরেক ইরাক বা আফগানিস্থানে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়-দায়িত্ব একান্তই ভারতের। কিন্তু ভারত সেখানে চরম ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আর সে ব্যর্থতার দায়ভার চাপাচ্ছে বাংলাদেশের ঘাড়ে। ভারতের অভিযোগ, বাংলাদেশ তার নিজ ভূমিতে বিচ্ছিনড়ববাদী ভারতবিরোধী গেরিলাদের প্রশিণ কেন্দ্র খুলেছে।
আরো গুরুতর অভিযোগ, এ কাজে তারা পাকিস্তানের আই.এস.আইয়ের সাথে সহযোগিতা করছে। অথচ এর কোন প্রমান তারা দেয়নি। সম্প্রতি তাদের বিদেশ নীতিতে আরেক উপসর্গ যোগ হয়েছে। ভারতের যে কোন শহরে বোমা বিস্ফোরণ হলে তদন্ত শুরুর আগেই ভারত সরকার বাংলাদেশীদের দায়ী করে বিবৃতি দিচ্ছে। যেন এমন একটি বিবৃতি প্রচারের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকে। কিন্তু এ অবধি এমন কাজে বাংলাদেশীদের জড়িত থাকার পে আজ অবধি কোন প্রমান তারা পেশ করতে পারিনি। এমন অপপ্রচারের ল্য
একটিই। আর তা হলো, বাংলাদেশের দুর্বল সরকারকে ব−াক-মেইল করা। এভাবে ট্রানজিটসহ ভারত যে সুবিধাগুলো চায় সেগুলি আদায়ে প্রচন্ড চাপসৃষ্টি করা। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির এটিই হলো এখন মূল স্ট্রাটেজী। ল্যনীয় হল, সেদেশে বার বার সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের প্রতি তাদের এ নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিপদ বাড়বে যদি এ লড়ায়ে বালাদেশ ভারতের প নেয়। পণ্যের পাশাপাশি সৈন্য ও সামরিক রশদ তখন রণাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। ফলে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রতিপ রূপে চিহ্নিত হবে বাংলাদেশ। আজ অবধি যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি তীরও ছুঁড়েনি তারাই পরিণত হবে পরম শত্র“রূপে। তখন সসস্ত্র হামলার ল্েয পরিণত হবে বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা। তখন অশান্ত হয়ে উঠবে দেশের হাজার মাইল ব্যাপী উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত। অহেতুক এক রক্তায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ। কথা হলো, যে গেরিলা যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বিশাল ভারতীয় বাহিনীই হিমসিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মত দেশ কি সফলতা পাবে? তখন বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিচ্ছিনড়বতাবাদীরা বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বিদ্রোহীগণ বন্ধু ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে এ এলাকায়। এ কারণেই বাংলাদেশের জন্য অতিশয় আত্মঘাতি হলো ভারতের জন্য ট্রানজিট দান। আরো ল্যণীয় হলো, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এ এলাকাটিতে ভূ-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন হচ্ছে অতি দ্রুতগতিতে। মেঘালায়, মিজোরাম ও ন্যাগাল্যান্ড রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই পরিণত হয়েছে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে। খৃষ্টান ধর্ম জোরে সোরে প্রচার পাচ্ছে পাশ্ববর্তী প্রদেশগুলিতেও। ফিলিপাইনের পর সমগ্র এশিয়ায় এটিই এখন সর্ববৃহৎ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। তাছাড়া ভারতীয় সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের আচরণে এ ধর্মমতের অনুসারিরাও অতি অতিষ্ট। উগ্র হিন্দুদের কাছে হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে দীা নেওয়া এক অমার্জনীয় অপরাধ। ফলে অতি জোরদার হচেছ খৃষ্টান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি অখন্ড খৃষ্টান রাষ্ট্র নির্মানের ধারণা। পশ্চিমা খৃষ্টান জগতে এমন রাষ্ট্রের পে আগ্রহ দিন দিন বাড়বে সেটিই স্বাভাবিক। ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে আলাদা করার পিছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছিল সে যুক্তির প্রয়োগ তখন ভারতের বিরুদ্ধেও হবে। ফলে খৃষ্টান জগত এবং চীনের ন্যায় বৃহৎ শক্তিও নিজ নিজ স্বার্থে স্বাধীনতাকামীদের প নিবে। এ অবস্থায় ভারতের প নেওয়ার খেসারত দিতে হবে অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৃহৎ শক্তির বিরাগ ভাজন হয়ে। বাংলাদেশের জন্য
সেটিও অতি বিপদজনক দিক।