
ব্যবসায়ের কাজে গিয়েছিলাম হিরোশিমাতে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে ট্রাম থেকে হিরোশিমায় নামি। আমার কোম্পানির হিরোশিমা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গাড়ি থেকে তারা আমাকে রিসিভ করবেন। কিন্তু তাদের পরিবর্তে আমাকে রিসিভ করল মার্কিন বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে ফেলা এটম বোমা ‘লিটল বয়’! মুহূর্তেই সব এলোমেলো। কি হয়েছে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিহত হয় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক। জ্ঞান ফিরে পাবার পর বুঝতে পারি চোখের আলো হারিয়েছি, কানের পর্দার শোনার ক্ষমতা শেষ, শরীরের ওপরের অংশ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, যেখানে হাত দিচ্ছি সেখান থেকেই চামড়া উঠে আসছে। বুঝলাম মৃত্যু খুব কাছে। সেভাবেই পড়ে ছিলাম দুই দিন। কিন্তু বেঁচে আছি দেখে কোন রকমে হিরোশিমা সিটি সেন্টারে গিয়ে ট্রেনে চড়ে আমার বাড়ি নাগাসাকির দিকে রওনা হই। বাড়ি পৌঁছতে না পৌঁছতেই ৯ আগস্ট আমার শহরে নিক্ষিপ্ত হয় দ্বিতীয় এটম বোমা ‘ফ্যাট ম্যান’। আমার ঘরের মধ্যে যখন রেডিয়েশনের সাদা ধবধবে আলো প্রবেশ করে তখন মনে করেছিলাম হিরোশিমায় বোমার মুখে পড়ার পর দুঃস্বপ্ন দেখছি মনে হয়। কিন্তু আবার আহত হলাম এবং জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখিনি। এটা ছিল আরো একটি এটম বোমা! দ্বিতীয় বোমার আঘাতে নিহত হয় ৭০ হাজার লোক। দুই বোমার আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী পার্শ¦প্রতিক্রিয়ায় অনেক লোক মারা গেছে। কিন্তু বেঁচে আছি আমি!
এই অতিভাগ্যবান ‘আমি’ হচ্ছেন জাপানের ৯৩ বছর বয়সী সুতোমু ইয়ামাগুচি। ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মিৎসুবিশি কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসাবে চাকরি করতেন। কোম্পানির কাজে হিরোশিমায় গিয়ে ৬ আগস্ট প্রথম এটম বোমার মুখে পড়েন। কিন্তু সেখান থেকে রক্ষা পেয়ে নাগাসাকিতে ফিরতে না ফিরতেই তার ভাগ্যে জোটে দ্বিতীয় এটম বোমার তিক্ত অভিজ্ঞতা। দুই এটম বোমার মুখে পড়ে বেঁচে যাওয়া একমাত্র জাপানি হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। হিরোশিমা এবং নাগাসাকির প্রশাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এটম বোমার রেডিয়েশন থেকে বেঁচে যাওয়া নারী-পুরুষদের তালিকা তৈরি করেছে। তাদের মেডিক্যাল চেক-আপ, চিকিৎসা ও দাফন সংক্রান্ত খরচ সরকার বহন করবে। কিন্তু সুতোমু ইয়ামাগুচির তালিকা করতে গিয়ে সরকার বিপাকে পড়ে যায়। কারণ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার নাম হিরোশিমা এবং নাগাসাকি প্রশাসনের তালিকায় ওঠে! সুতোমু ইয়ামাগুচি দাবির প্রেক্ষিতে সরকার তদন্তে নামে। এরপর সরকার সত্যিই মেনে নেয় যে, ইয়ামাগুচি যে দাবি করছেন তা সত্য। এখন উভয় শহরের এটম বোমার শিকার হওয়াদের তালিকায় তার নাম উঠেছে। এরপর তিনি বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হন। বর্তমানে তিনি নাগাসাকিতে তার একমাত্র কন্যার সঙ্গে বাস করছেন। কন্যার বয়স এখন ৬০ বছর। শরীরের ঘায়ের দাগ এখনো শুকায়নি। তবে চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন এবং এক কানে শুনতে পান। ইয়ামাগুচি বলেছেন, যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন তিনি নতুন প্রজন্মকে শান্তির পথে চলার আহ্বান জানাবেন। এটম বোমার মতো ভয়াবহ দানবের বিপক্ষে অবস্থান নিতে অনুরোধ করবেন।(সংগৃহীত)
No comments:
Post a Comment