Thursday 1 October 2009

ভারতের তামিলনাড়ুর একটি মন্দিরে নারীদের চাবুক মারার দৃশ্য


সম্প্রতি মহিলাদের চাবুক মারার ঘটনা ঘটেছে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে। আর একজন দু’জন নয়, মাত্র দু’দিনের মধ্যে চাবুক মারা হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি নারীকে। তাদের মধ্যে স্কুলের ছাত্রী ও বেশ কিছু কিশোরীও রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর নামকাল জেলার বাভিথ্রাম ভেল্লালপট্টি এলাকার শ্রীআচাপান মন্দিরে।
প্রাচীন এই হিন্দু মন্দিরটিতে প্রতি বছর বিজয়া দশমীর দিনে মূলত নারীদের নৃশংসভাবে চাবুক মারার প্রথাটি স্খায়ী এক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নিয়ম মোতাবেক ওই বছরও বিজয়ী দশমীর দিন অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর নারীদের চাবুক মারার এই ‘উৎসব’ পালিত হয়েছে। শক্তিশালী যুবক পুরোহিতরা ধর্মীয় পোশাক পরিধান করে শান্তি ও মুক্তির প্রত্যাশী কিংবা অশুভ শক্তি ভর করা বলে চিহ্নিত নারীদের একের পর এক চাবুক মারতে থাকেন। পুরোহিতদের চাবুক দ্বারা ক্ষতবিক্ষত হলে কল্যাণ পাওয়া যাবে কিংবা অশুভ প্রেতাত্মা বিতাড়িত হবেথ এই হচ্ছে এলাকার হিন্দু পুরোহিত ও তাদের অনুসারীদের বিশ্বাস। প্রতি বছর এ জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ বছর দেখা যায়, মন্দিরের সামনে চাবুক মারার জন্য আধকিলোমিটার লম্বা সারিতে নারীদের জড়ো করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর দেখা গেল এক নৃশংস দৃশ্য। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া কিশোরী ও তরুণীসহ পুরোহিতদের মোটা দড়ির সজোর চাবুক আছড়ে পড়ছে মহিলাদের শরীরে। আহত এই নারীরা মাঠের মধ্যে পড়ে কাতরাচ্ছেন। অনেকের শরীরের চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কেউ কাঁদছেন সশব্দে আর কেউ বা নীরবে অশ্রুপাত করছেন। অনেককেই চার-পাঁচবার করে চাপকানো হচ্ছে।
দ্বাদশ ক্লাসের ছাত্রী বণিতা চাবুক খেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কাঁদতে কাঁদতে সে সাংবাদিকদের জানায়, তাকে চাবুকের মার সহ্য করার জন্য লাইনে বসতে হয়েছে। কারণ তার বাবা-মা মনে করেন, লেখাপড়ায় তার মন নেই। আর এটা হয়েছে নাকি কোনো অশুভ আত্মার জন্য। বণিতা আরো বলে, আমার বাবা-মা জোর করে এখানে আসতে আমাকে বাধ্য করেছে। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে আমার বìধুরা আমাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। ভাববে, আমি ভূতপ্রেত দ্বারা আচ্ছন্ন। নারীদের এই চাবুক মারার ‘উৎসবে’ ১১-১২ বছরের ছাত্রীরাও রয়েছে। তাদেরও অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত করার জন্য এখানে আনা হয়েছে। একজন নববধূকেও পুরোহিতদের চাবুকের প্রহারে অংশ নিতে এখানে নিয়ে আসা হয়। তার শ্বশুর-শাশুড়ি মনে করেন, নববধূর মধ্যে অশুভ শক্তি ভর করে আছে। স্খানীয় এক ব্যক্তি জানান, এইভাবে পুরোহিতদের চাবুক মারা সহ্য করতে পারলে মানসিক এবং শারীরিক সব অসুখ দূর হয় বলে তাদের বিশ্বাস।
এই জঘন্য প্রথা কি অপরাধ নয়? এ কথা জিজ্ঞেস করলে মন্দিরের পুরোহিত কে গুয়ানদান বলেন, বিষয়টি মোটেই সে রকম নয়। বিশ্বাসীরা এখানে নিজে থেকে হাজির হন বলেই আমরা চাবুক দ্বারা প্রহার করি। প্রায় হাজার বছর ধরে এই প্রথা চলছে। আমরা এই প্রথা তুলে দিতে পারি না।
২৮ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর দিন শুরু হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর এই চাবুক মারার ‘উৎসব’ শেষ হয়। এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ সমবেত হন। চাবুক মারার ‘সুবন্দোবস্তের জন্য’ পুলিশ ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এখানে উপস্খিত থাকেন। পুলিশের উপস্খিতি অবশ্য এবার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

No comments:

Post a Comment